সন্তানধারণের প্রথম মাস থেকেই নিয়মিত চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে কার্ড করিয়েছিলেন মৌমিতা মল্লিক। কিন্তু মাস তিনেক পর থেকেই শুরু হল বমি। চোখের সাদা অংশ হলুদ হতে থাকল। অভিযোগ, ওই হাসপাতালের চিকিৎসককে শারীরিক অস্বস্তির কথা জানালেও তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেননি। চার মাসের মাথায় শয্যা নিলেন মৌমিতা। চিকিৎসক তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে কয়েক সপ্তাহের জন্য কিছু ওষুধ বদলে দিলেন। কিছুটা সুস্থ হলেন মৌমিতা। কিন্তু মাস দুয়েক পরে আবার একই সমস্যা। চিকিৎসক জানালেন, সন্তানসম্ভবা মহিলাদের নানা শারীরিক জটিলতা দেখা যায়। তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। মৌমিতা যখন ন’মাসের সন্তানসম্ভবা তখন হঠাৎ প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়তে শুরু করল। ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হল তাঁকে। সেই রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালেন, দ্রুত কোনও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পাঠানো দরকার মৌমিতাকে।
হঠাৎ কী জটিলতা তৈরি হল, বুঝতে পারছিলেন না বাড়ির লোকেরা। মৌমিতাকে পিজিতে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁর অবস্থা দেখে আঁতকে উঠলেন। জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে জন্ডিসের সমস্যায় ভুগছেন মৌমিতা। সময় মতো চিকিৎসা শুরু করলে হয়তো জটিলতা এড়ানো যেত। কিন্তু তখন আর কিছু করার উপায় নেই। সেই রাতে মৌমিতা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু ২৮ বছর বয়সি মৌমিতার তা আর জানা হয়নি। সেই রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। দিনটি ছিল এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি। সুবিচার চেয়ে এখন দরজায় দরজায় ঘুরছেন মৌমিতার পরিবারের লোকেরা।
তাঁদের মতোই লড়াইয়ের পথ খুঁজছেন শ্যামল মুখোপাধ্যায়ের পরিবারও। বছর দুয়েক আগে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় শ্যামলবাবুকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা বাড়ির লোককে কখনও জানান তিনি হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন, কখনও আবার বলেন কিডনির সমস্যার জন্যই তাঁর শারীরিক অবনতি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির দিন চারেক পরে শ্যামলবাবুর মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসাই তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের লোকেদের।
শনিবার ছিল রোগী দিবস। সেই উপলক্ষে চিকিৎসায় গাফিলতির শিকার রোগীরা ও তাঁদের পরিজনদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্ট’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেখানেই মৌমিতা ও শ্যামলবাবুর পরিবারের লোকেরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।
এই সংস্থার সভাপতি, চিকিৎসক কুণাল সাহা বলেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রে মানুষ দিশা পান না কোথায় যাবেন। দরজায় দরজায় ঠোক্কর খেয়ে ফিরতে হয় তাঁদের। এই সব পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy