প্রহরা: গোলমালের খবর পেয়ে নার্সিংহোমে পুলিশ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
দিন কুড়ি আগে স্নায়ুর সমস্যা নিয়ে তপসিয়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন এক প্রৌঢ়। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, আইসিইউ-তে নিয়ে যেতে হবে। ১৮ দিন সেখানেই ভর্তি ছিলেন তিনি। বুধবার ভোর পৌনে পাঁচটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ফোন করে পরিবারকে জানানো হয়, রোগী মারা গিয়েছেন। পুলিশ জানায়, এর পরেই পরিজনেরা নার্সিংহোমে ভাঙচুর শুরু করেন। ঘটনায় চার জন গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের নাম মহম্মদ সানওয়ার, মহম্মদ আফতাব, মহম্মদ শোয়েব এবং মহম্মদ মুখতার।
মুশারফ আলি (৫৭) নামে ওই রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ফোন করতে থাকেন পরিজনেরা। অভিযোগ, তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পাঁচটা নাগাদ নার্সিংহোমে পৌঁছলে পরিজনেদের জানানো হয়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মুশারফের মৃত্যু হয়েছে।
রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতির জেরেই মৃত্যু হয়েছে মুশারফের। রোগীর পরিজনেরা নার্সিংহোমে পৌঁছলে কর্মী, নার্স ও চিকিৎসকদের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়। নার্সিংহোমের কর্মীদের অভিযোগ, এক দল যুবক কাচের দরজা ভেঙে দেয়। খবর পেয়ে পৌঁছন লালবাজারের কর্তারা। নামে বিশাল পুলিশ বাহিনীও।
এ দিন মৃতের বোন জেসমিন বেগম জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে মল্লিকবাজারের এক বেসরকারি হাসপাতালে যান মুশারফ। সেখানের এক চিকিৎসক তপসিয়ার ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জেসমিনের অভিযোগ, চিকিৎসা ব্যয়বহুল হবে জানিয়ে ভর্তির পরেই তাঁদের দু’লক্ষ টাকা জমা দিতে বলেছিল নার্সিংহোম। কিন্তু কয়েক দিন পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, যে সব ইঞ্জেকশন এবং ওষুধ রোগীকে দেওয়া হচ্ছে, তার দাম বাজারের থেকে অনেক বেশি। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনার কথা বললে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, বাইরের ওষুধে রোগীর কোনও সমস্যা হলে নার্সিংহোম দায়িত্ব নেবে না।
মৃতের স্ত্রী আফিসা আলির অভিযোগ, ভর্তির পর থেকেই চিকিৎসার করার থেকে কত টাকা জমা দেওয়া হবে, তা নিয়েই ব্যস্ত ছিল নার্সিংহোম। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রোগীর মৃত্যুর পরে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক কেন দায় এড়াচ্ছেন? কেন তিনি কথা বলছেন না?’’
নার্সিংহোমের তরফে আইসিইউ ইন-চার্জ, চিকিৎসক ভাস্কর রায় জানান, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই পরিজনেরা বচসা শুরু করেন। একাধিক যুবক রোগীর পরিজন পরিচয়ে নার্সিংহোমে ঢুকে চিকিৎসকদের হুমকি দিতে শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে কর্তব্যরত আরএমও শৌচাগারে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে তিনি গোপনে নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে যান। তাই হয়তো ভয়ে ওই চিকিৎসক কথা বলতে চাইছেন না।’’
তবে চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হয়েছে কি না, সেটা তদন্ত করলেই জানা যাবে বলে তিনি জানান। বেশি দামে ওষুধ কেনার অভিযোগ সম্পর্কে ভাস্করবাবু জানান, স্থানীয় দোকান থেকে কম মানের ওষুধ নিয়ে এলে সমস্যা হয়। রোগীর জটিল সমস্যার জন্য নির্দিষ্ট মানের ওষুধ দরকার ছিল।
হাসপাতালের তরফে ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ বিকেলে চার জনকে গ্রেফতার করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy