কবরী-বিলাস: খোঁপার পসরা সাজিয়ে মহম্মদ রফিক। নিজস্ব চিত্র
চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের সামনে গিজগিজ করছে কালো মাথা। তার মধ্যেই এক মহিলার চুলে চিরুনি দিয়ে কারুকাজে ব্যস্ত এক যুবক তারস্বরে হাঁকছেন, ‘মাত্র কুড়ি টাকা, এ বার মা-মাটি-মানুষ খোঁপা’!
রাস্তার ধারে ধারে লাগানো চোঙার আওয়াজে মাঝেমধ্যেই চাপা পড়ে যাচ্ছে ওই যুবকের গলার আওয়াজ। কিন্তু তাতে কী? মা-মাটি-মানুষ খোঁপার কথা এক বার কানে যেতেই উৎসুক কর্মীরাও ঝুঁকে পড়ছেন সে দিকে। কয়েক জন ঝটপট কিনেও ফেললেন ভিড় ঠেলে। বাকিরা ঘিরে দাঁড়ালেন খোঁপা বাঁধার বিজ্ঞানটা বুঝে নিতে। তারই মধ্যে কোনও মতে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতেই বোঝা গেল আসল বিষয়টা। ভিড় রাস্তায় বসেই যে মহিলার মাথায় কারুকাজ চলছে, সেটি আসলে লোহার রডে বসানো ফাইবারের তৈরি মডেল। সেই মডেলের মাথাতেই বসানো রয়েছে এক ঢাল হাল্কা বাদামি পরচুল। সেই চুলেই বিশেষ ধরনের চিরুনি দিয়ে নানা কায়দায় খোঁপা বানাচ্ছেন শ্যামনগরের বাসিন্দা মহম্মদ রফিক।
মা-মাটি-মানুষ শাড়ির পরে কি এ বার খোঁপা? প্রশ্নটা শুনেই হেসে ফেললেন রফিক। বললেন, ‘‘না না, এমনিতে এই খোঁপার কোনও নাম নেই। কিন্তু তৃণমূলের সভায় এসে কি ফিল্ম স্টারের নাম বলব?’’ তবে এ বার মন ভাল নেই আগরপাড়া, কাঁকিনাড়া, দমদম স্টেশনে ঘুরে এই খোঁপার চিরুনি বিক্রি করা রফিকের। ১০ বছর ধরে ২১ জুলাই চলে আসেন ধর্মতলায়। কিন্তু এ বছর ভিড় ঠেলে এগোতে পারেননি বেশি দূর। বসে পড়েছেন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতেই।
রফিক বললেন, ‘‘ধর্মতলার দিকে থাকলে দিদিকে সামনে থেকে দেখাও যায়। ভাল বেচাকেনাও হয়।’’ বছর পঁয়ত্রিশের যুবকের দাবি, সামনে যেতে না পারায় তাঁর ‘মা-মাটি-মানুষ’ খোঁপার চিরুনি বিক্রি ভাল হয়নি। তা ছাড়া, খোঁপা-চিরুনির দামটাও এ বার বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ায় সমস্যাও বেড়েছে। ‘মা-মাটি-মানুষ’ খোঁপা বানানোর চিরুনির দাম এ বছর ২০ টাকা হয়ে গিয়েছে যে। আর তাই এ বার ২০০টির মধ্যে মাত্র ১০০টি চিরুনি বিক্রি হয়েছে রফিকের।
তবে হার মানার পাত্র নন তিনি। বাতিস্তম্ভে লাগানো চোঙায় তখনও পরপর নেতার গলা শোনা যাচ্ছে আর রফিকও পাল্লা দিয়ে তারস্বরে চেঁচিয়ে বলে চলেছেন, ‘মিস করবেন না, এ বার মা-মাটি-মানুষ খোঁপা’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy