হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালানো বন্ধ করতে লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। পথ দুর্ঘটনা এড়াতে নানা নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে। এ বার সেই তালিকায় সংযোজন হতে পারে নিজস্বী তোলার নিয়মবিধি। গাড়ি চালানোর সময় কিংবা রেললাইনের সামনে নিজস্বী তোলা নিয়ে বিধি-নিষেধ গড়ে তোলার চিন্তা করছেন পুলিশ কর্তারা। বৃহস্পতিবার লিলুয়ার কাছে চলন্ত ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার জেরে তিন জনের মৃত্যু হয়।
ভিড় এড়াতে কয়েক বছর আগেই দুর্গাপুজোর সময় মণ্ডপের ভিতরে নিজস্বী তোলা বন্ধ করেছিল কলকাতা পুলিশ। কারণ, প্রতিমা দর্শনের সময় প্রতিমার সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে সময়ের হুঁশ থাকত না অনেকেরই। দেখা যাচ্ছে, এই হুঁশের অভাবেই অনেক সময় বড় বিপদ ঘটে যাচ্ছে।
শুধু বেড়াতে গিয়ে কিংবা কোনও অনুষ্ঠানে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তোলা নয়, গাড়ি কিংবা বাইক চালানোর সময় নিজস্বী তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করাই এখন রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। এর জেরে অনেক সময়ই পথ দুর্ঘটনা ঘটে।
এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘গণ সচেতনতা প্রয়োজন। শুধু আইন করে সব সমস্যার সমাধান হয় না। তবে, দুর্ঘটনা এড়াতে যা যা করা দরকার আমরা তা করব। প্রয়োজনে সুরক্ষার জন্য নিজস্বী তোলার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।’’
সূত্রের খবর, পার্ক কিংবা রেস্তোরাঁয় বসে সেলফি তুললে কোনও সমস্যা নেই। ঠিক যেমন বা়ড়িতে কিংবা রেস্তোরাঁয় মদ্যপানে আপত্তি নেই প্রশাসনের। কিন্তু মদ্যপান করে গাড়ি চালানো অপরাধ। ঠিক একই ভাবে, রাস্তা পার করতে গিয়ে, কিংবা গাড়ি চালানোর সময় নিজস্বী তোলা যাবে না, এমনই নিয়ম তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ঝুঁকির আনন্দ এবং সচেতনতার অভাব এই দু’য়ের জেরেই নিজস্বী ডেকে আনছে বিপদ। এই প্রসঙ্গে সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র জানান, নিজের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি কারও সাহায্য ছাড়া নিজেই তুলে ফেলার মধ্যে একটা স্বাধীনতার স্বাদ আছে। বিপজ্জনক মুহূর্তও খেলার ছলে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘ঝুঁকির প্রতি মানুষের, বিশেষত তরুণ-প্রজন্মের আকর্ষণ চিরন্তন। তবে, যে কোনও প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় ন্যূনতম মনোযোগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে হয়তো দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই মনোযোগই বিপদ ডেকে আনছে।’’ মনস্তত্ববিদ অনিরুদ্ধ দেব আবার বলছেন, ‘‘সমস্যাটা যতটা না নিজস্বীর তার চেয়ে বেশি আত্মকেন্দ্রিকতার। স্থান-কাল ভুলিয়ে দিচ্ছে এই আত্মকেন্দ্রিকতা।’’ পাশাপাশি তিনি এ-ও মনে করিয়ে দিলেন ঝুঁকি নেওয়া এবং সেই ঝুঁকি জাহির করার মধ্যে উত্তেজনা খুঁজে নিচ্ছে এই প্রজন্ম। এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার পিঠ চাপড়ানিকেও দায়ী করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy