সতর্কতা: শহরে ছড়িয়ে এমনই বহু বিপজ্জনক বাড়ি। ফাইল চিত্র
পুর প্রশাসন চায়, শহরে যে সব বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে, মালিকেরাই সেগুলি ভেঙে ফেলুন। তার পরে ওই জমিতে তাঁরা নতুন কাঠামো তুলুন। কিন্তু বাড়ির মালিক যদি এই প্রস্তাবে অসম্মত হন, তা হলে কী করা হবে সেই বিষয়টি পরিষ্কার ছিল না। ওই সমস্যা কাটাতে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছে কলকাতা পুরসভা।
পুরসভা সূত্রের খবর, মালিক যদি বিপজ্জনক বাড়িটি ভেঙে নতুন করে গড়তে রাজি না হন, তা হলে প্রোমোটার সংস্থাকে দিয়ে তা ভেঙে নির্মাণ শুরুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে বিপজ্জনক হিসেবে যে বাড়িকে নোটিস দেওয়া হয়েছে, সেটি ভাঙার আগে অবস্থা খতিয়ে দেখবে খড়্গপুর আইআইটি, শিবপুরের আইআইইএসটি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি একটি দল। ওই দলের সবুজ সঙ্কেত মিললেই ভাঙা-গড়ার কাজ শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকের থেকে নো-অবজেকশন শংসাপত্র নিতে হবে পুরসভাকে।
কী আছে নতুন পরিকল্পনায়? পুরসভা সূত্রের খবর, কোন সংস্থা (প্রোমোটার) ওই বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়বে তা ঠিক করতে টেন্ডারের দায়িত্ব থাকবে পুরসভার উপরে। বিপজ্জনক বাড়িতে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের নব নির্মিত বাড়িতে জায়গা দিতে হবে। একই সঙ্গে মালিককেও তাঁর প্রাপ্য মালিকানা দিতে হবে। বাড়ি ভাঙার সময়ে যাঁদের সরানো হবে, তাঁদের অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করতে হবে প্রোমোটারকেই। কত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করা হবে, তা-ও জানিয়ে দিতে হবে কাজের বরাত পাওয়ার সময়ে। সময়ে কাজ শেষ না হলে বা মাঝপথে কাজ বন্ধ হলে সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারকে তার জন্য ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।
এই কাজে যাতে কোনও আইনি বা প্রশাসনিক জটিলতা দেখা না দেয়, তা তত্ত্বাবধান করবে পুরসভার যুগ্ম কমিশনার (সাধারণ)-এর নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি। তাতে থাকবেন ডিজি (শহর পরিকল্পক), ডিজি (বিল্ডিং), পুরসভার অর্থ দফতরের প্রধান, মুখ্য অডিট অফিসার এবং মুখ্য আইন আধিকারিক। পুরসভা সূত্রের খবর, নতুন পরিকল্পনা আগামী মেয়র পরিষদের বৈঠকে পেশ করার চেষ্টা করছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মত্যু হয়। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানের নির্দেশ দেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। সিদ্ধান্ত হয়, মানুষের নিরাপত্তায় বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ক্ষমতা পুরসভার হাতে দিতে পুর আইনের কিছু সংযোজন করা হবে। গত বাজেট অধিবেশনে কলকাতা পুর বিল্ডিং আইনের ৪১২এ ধারা যুক্ত হয়েছে। কিন্তু মালিক নিজে থেকে বাড়ি ভেঙে তা ফের নির্মাণ করতে না চাইলে কী হবে, তা অস্পষ্ট ছিল। নতুন পরিকল্পনা তা দূর করতেই।
যদিও পুরসভার অন্দরে একাধিক অফিসারের ধারণা, এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে পুর প্রশাসনকে বেগ পেতে হবে। তাঁদের কথায়, জমির আসল কর্তৃত্ব মালিকের। তাঁদের বঞ্চিত করে কিছু হলেই মামলা হতে পারে। তখন বিষয়টিই থমকে যাবে। তাই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে মেয়র পরিষদের বৈঠকে পেশ করার আগে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মত ওই অফিসারদের একাংশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy