Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
শব্দযুদ্ধে বৈঠক

কথা শোনে না কেউ, নালিশ আবাসনে

দীপাবলিতে শব্দবাজি রোখার ক্ষেত্রে নিজেদের অসহায়তার কথা মেনে নিচ্ছেন শহরের বিভিন্ন বহুতল আবাসিক সংগঠনের অধিকাংশ কর্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

দীপাবলিতে শব্দবাজি রোখার ক্ষেত্রে নিজেদের অসহায়তার কথা মেনে নিচ্ছেন শহরের বিভিন্ন বহুতল আবাসিক সংগঠনের অধিকাংশ কর্তা। রবিবার পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদর দফতর সল্টলেকের পরিবেশ ভবনে বৈঠকে পর্ষদ ও পুলিশকর্তাদের উপস্থিতিতে এমনটাই জানালেন তাঁরা। বেশ কয়েকটি আবাসনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, ‘‘বহু আবাসিক শব্দবাজি কিনে ছাদে বা টেরাসে ফাটান। নিষেধ করতে গেলে উল্টে বলেন, ‘নিজেদের টাকায় কিনেছি। আপনারা বলার কে?’ কোনও কথাই শুনতে চান না তাঁরা।’’

কলকাতার বহুতল আবাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আগেই লালবাজারে বৈঠক করেছে পুলিশ। এ দিন বৈঠক ডেকেছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। যেখানে কলকাতা ছাড়াও বিধাননগর ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের প্রায় ১০০টি হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। কলকাতা পুলিশ ছাড়াও আলোচনায় ছিলেন বিধাননগর ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তারা। বলা হয়েছে, কালীপুজোয় কোনও আবাসনে শব্দবাজি ফাটলে প্রথমে নিষেধ করা, তার পরেও না শুনলে পর্ষদ ও পুলিশের কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ জানাতে হবে।

রাজারহাটের এক বহুতল আবাসনের প্রতিনিধির পরামর্শ, ‘‘নিষিদ্ধ শব্দবাজি ঠেকাতে পর্ষদের তরফে একটি ভিডিও ফিল্ম তৈরি করা হোক। প্রতিটি পুজো কমিটির প্যান্ডেলে ওই ছবি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হোক।’’ এই পরিকল্পনা স্বাগত জানিয়ে পর্ষদ চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘আগামী বছর যাতে এটা করা যায়, সে বিষয়ে পর্ষদ উদ্যোগী হবে।’’

তবে পুলিশের দাবি, কিছু আবাসনের প্রতিনিধির কথা শুনে মনে হয়েছে তাঁরা রাজ্যে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ঠিকমতো জানেনই না। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকে একাধিক আবাসনের প্রতিনিধি জানতে চান, চকোলেট বোমা, দোদমা এগুলো কি নিষিদ্ধ বাজির তালিকায়? তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এই বাজিগুলিও রয়েছে তালিকায়। প্রসঙ্গত, এ বার ৯০ ধরনের বাজি নিষিদ্ধ হতে চলেছে। তবে কোন কোন বাজি নিষিদ্ধ, তা জানিয়ে এখনও কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি পর্ষদ বা পুলিশ। আজ, সোমবার ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার কথা।

পুলিশের একাংশের বক্তব্য, বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় বা পর্ষদের তরফে অন্যান্য বারের মতো দুর্গাপুজোর মণ্ডপে মণ্ডপে প্রচারমূলক পোস্টার না থাকায় সাধারণ মানুষের একাংশের মধ্যে এ নিয়ে বিভ্রান্তি থেকে গিয়েছে। তবে পর্ষদ সূত্রের খবর, দু’-তিন দিনের মধ্যে শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রচারমূলক এসএমএস যাবে মোবাইলে। পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ বাজি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন করতেই এই উদ্যোগ।’’ কিন্তু তা এত দেরিতে কেন, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

পর্ষদ এ দিন আবাসনের প্রতিনিধিদের জানিয়ে দিয়েছে, রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে কোনও বাজিই ফাটানো যাবে না। অভিযোগ, সেটাও বহু আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশ মানেন না। মাঝরাতেও চলে বাজি পোড়ানো। পর্ষদের তরফে বলা হয়েছে, এটা চলতে পারে না। যার প্রেক্ষিতে কয়েকটি আবাসনের প্রতিনিধি বলেন, ‘‘বারবার সচেতন করেও কোনও লাভ হয় না। আবাসিকদের বিরুদ্ধে আমরা তো আর ব্যবস্থা নিতে পারি না!’’

পুলিশের পরামর্শ, প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘বহুতল আবাসনে বহু ধনী ও নামীদামি লোক থাকেন। তাঁরা নিজেদের প্রভাবশালী বলে মনে করেন। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে, আইন সকলের ক্ষেত্রেই সমান।’’

অভিযোগ, অনেক বহুতলের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে ভিতরের ফাঁকা জায়গা বা ছাদে দেদার শব্দবাজি ফাটানো হয়। পুলিশ গেলে কিছুক্ষণ পরে তালা খুলে দেওয়া হয় ঠিকই, তবে তখন আবার বলা হয়, লিফ্‌ট অকেজো (অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা ইচ্ছাকৃত ভাবে করা বলে অভিযোগ)। সিঁড়ি ভেঙে পুলিশ ছাদে পৌঁছে আর কাউকে দেখতে পায় না। এই পরিস্থিতিতে বিধাননগর পুলিশ এ বার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, দীপাবলির সন্ধ্যায় বহুতলের মূল ফটক বন্ধ করে রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পর্ষদ জানায়, বেআইনি শব্দবাজির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে কালীপুজোর আগের রাত থেকেই কলকাতা ও হাওড়ায় পর্ষদের সাতটি দল পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে। প্রতিটি দলে থাকবেন দু’জন আধিকারিক। বহুতল বাড়ি ও আবাসনে তাঁরা বাড়তি নজরদারি করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sound crackers Buidings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE