Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সিন্ডিকেটের বিবাদে এ বার নিউটাউনে চলল গুলি

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এ বার গুলি চলল নিউটাউনে। ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। পুলিশ জানিয়েছে, নিউটাউনের থাকদাঁড়ি এলাকার প্রামাণিক পাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। সেখানে সুশান্ত মণ্ডল নামে এক জনের বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এলাকার সিন্ডিকেট চাঁই সমীর (ভজাই) সর্দারের মেজ ছেলে অভিজিৎ-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার পিছনে রয়েছে এলাকার সিন্ডিকেটের দখলদারি আর গোষ্ঠী রাজনীতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ১৫:৩০
Share: Save:

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এ বার গুলি চলল নিউটাউনে। ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। পুলিশ জানিয়েছে, নিউটাউনের থাকদাঁড়ি এলাকার প্রামাণিক পাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। সেখানে সুশান্ত মণ্ডল নামে এক জনের বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এলাকার সিন্ডিকেট চাঁই সমীর (ভজাই) সর্দারের মেজ ছেলে অভিজিৎ-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার পিছনে রয়েছে এলাকার সিন্ডিকেটের দখলদারি আর গোষ্ঠী রাজনীতি। এই ঘটনায় নিমাই নস্কর বলে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ভজাই সর্দারের অনুগামী বলে পরিচিত।

বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে উত্তপ্ত নিউটাউন বিধানসভার বিভিন্ন এলাকা। বিবদমান দুই গোষ্ঠী বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত ও স্থানীয় সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের অনুগামী বলেই এলাকায় পরিচিত। এত দিন সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হাতাহাতি, মারামারি আর পার্টি অফিস দখলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে তা গুলি চালানোর মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে।

স্থানীয় মানুষ জানান, দীর্ঘ দিন পরে নিউটাউন এলাকায় মঙ্গলবার রাতে গুলি চলেছে। শেষ বার ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় সিপিএমের দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল খেজের আলি নামে এক তৃণমূল কর্মীর। সেই ঘটনায় গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল বর্তমানে এলাকার বিধায়ক সব্যসাচীবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ভজাই সর্দারের বিরুদ্ধেই। ভজাই তখন থাকদাঁড়ি আর মহিষবাথানে সিপিএমের ত্রাস ছিলেন। এ বার গুলি চালানোর অভিযোগ তাঁর মেজো ছেলের বিরুদ্ধে।

যাঁর বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে গুলি চলে সেই সুশান্ত মণ্ডলের দাবি, ঘটনার সময় তিনি তাঁর চার বছরের ছেলেকে নিয়ে বাড়ির দোতলার ঘরে খেলা দেখছিলেন। সেই সময় বাড়ির বাইরে গুলির শব্দ পান। কিন্তু গুলি যে তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করেই ছোড়া হয়েছে তা প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি। সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘গুলির আওয়াজ পেয়েই ঘরের আলো বন্ধ করে দিই। একটি জানলা খোলা ছিল। ভয়ে ছেলেকে নিয়ে খাটের তলায় ঢুকে পড়ি। সকালে উঠে দেখি একটি গুলির শেল খাটের মশারি টাঙানোর জায়গায় আটকে। আর একটি ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে। তার পরে সকালে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখি দেওয়ালে গুলি লেগে আছে। গুলির খোল পাওয়া গিয়েছে বাড়ির আশেপাশেও।’’

কিন্তু, কেন মনে হল ঘটনায় ভজাই সর্দারের হাত রয়েছে?

সুশান্তর দাবি, ‘‘ঘটনার সময় বাড়ির বাইরে লোকজন অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছিল তাদের মধ্যে ভজাইয়ের মেজো ছেলে অভিজিৎ ছিল।’’

এ দিন সুশান্তের বাড়ির দোতলার জানলার বাইরের দেওয়ালে বেশ কয়েকটি গুলির দাগ দেখা যায়। এলাকা থমথমে। এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী টহল দিচ্ছে।

সুশান্তবাবু জানান, তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা দীপঙ্কর প্রামাণিকের সঙ্গে থাকাতেই তাঁর উপরে রাগ ভজাই গোষ্ঠীর। দীপঙ্করবাবু আবার সাংসদ কাকলিদেবীর ঘনিষ্ঠ বলেই নিউটাউনে পরিচিত। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘ভজাইয়ের লোকজন আমাকে বেশ কয়েক দিন ধরেই শাসাচ্ছিল যাতে আমি যাতে নিজের এলাকার বাইরে না যাই।’’

যদিও ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন ভজাইবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, তাঁরা এ বার কিছু কিছু জায়গায় সিপিএমকে জিতিয়েছেন। এখন চারিদিকে তৃণমূল জিতে যাওয়ায় গ্রামের লোকেদের কাছে ওঁদের মুখ পুড়েছে। তাই নিজেরা নিজেদের বাড়িতে গুলি চালিয়ে আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করছে। আমি পুলিশকে বলেছি ঘটনার তদন্ত করতে।’’

উল্লেখ্য বিবদমান দুই গোষ্ঠীরই একটা বড় অংশ নিউটাউনের সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সেই সিন্ডিকেটের লড়াই এ বার বিধানসভা নির্বাচনের সময় দু’পক্ষের কার্যত রাজনৈতিক লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়। ঘটনাচক্রে সব্যসাচীবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ভজাইয়ের এলাকা থেকে অত্যন্ত কম ব্যবধান জেতে তৃণমূল। ফলে ভজাই বিরোধীদের ওপরে আক্রমণ যে নামবে তা আঁচ করছিলেন থাকদাঁড়ির বাসিন্দারা।

তবে সব্যসাচীবাবু কিংবা কাকলিদেবী— কেউই ঘটনা নিয়ে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। কাকলিদেবী বলেন, ‘‘কার বাড়িতে গুলি করা হয়েছে তা নিয়ে আমায় কেউ কিছু জানায়নি। খোঁজ নেব।’’ আবার সব্যসাচীবাবুও বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি খোঁজ নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE