Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

রাইড বাতিলেও এ বার কড়ি গুনুন ওলা-উবেরে

‘সার্জ প্রাইসিং’-এর সমস্যায় আগেই জেরবার ছিলেন গ্রাহকেরা। এ বার তার সঙ্গে যোগ হল ‘ক্যানসেলেশন ফি’। অর্থাৎ রাইড বাতিল করার মাসুল। যার জেরে ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ-নির্ভর ক্যাব নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি ক্রমেই বাড়ছে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৩
Share: Save:

‘সার্জ প্রাইসিং’-এর সমস্যায় আগেই জেরবার ছিলেন গ্রাহকেরা। এ বার তার সঙ্গে যোগ হল ‘ক্যানসেলেশন ফি’। অর্থাৎ রাইড বাতিল করার মাসুল। যার জেরে ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ-নির্ভর ক্যাব নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি ক্রমেই বাড়ছে।

যাত্রীরা জানাচ্ছেন, ট্যাক্সির প্রত্যাখ্যানে বিরক্তি বাড়ে। তাই ওলা-উবেরে ঝোঁক বেড়েছিল। কিন্তু এখন ওলা বা উবেরের চালকেরাও প্রায়শই যেতে চান না। কিংবা বলেন, অমুক জায়গায় যানজটে আটকে রয়েছেন বা গন্তব্যের রাস্তা চেনেন না। কিন্তু এ সব শুনতে গিয়ে যদি পাঁচ মিনিট হয়ে যায়, এবং তার পরে আপনি ‘রাইড’ বাতিল করেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকেই গুনাগার দিতে হতে পারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। ‘ওলা-শেয়ার’-এ টাকার অঙ্ক এক হলেও সময়সীমা মাত্র দু’মিনিট। উবেরে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল আগেই। ওলায় শুরু হয়েছে চলতি মাস থেকে।

শহরের যে কোনও জায়গায় ট্যাক্সির দরকার হলে, প্রয়োজন শুধু একটি স্মার্ট ফোন। এক ক্লিকেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হাজির হবে ট্যাক্সি। এ রকমই দাবি নিয়েই হাজির হয়েছিল ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সি। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের পাহাড়।

যাত্রীদের অভিযোগ, রাত দশটা বাজলেই হল। ওলা-উবেরের চালকদের প্রত্যাখ্যানের বহর বাড়ে। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এঁদের অনেকেই নতুন কাজে এসেছেন। রাস্তাঘাট চেনেন না। ফলে, যাত্রীরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন বোঝাতে সমস্যায় পড়েন। কোথায় যাবেন, তা নিয়েও জেরবার হন।’’ তার উপরে সার্জ প্রাইসিং তো আছেই। উৎসবের মরসুমে কিংবা বর্ষার রাতে যার জেরে ভাড়া বেড়ে দাঁড়ায় চার-পাঁচ গুণ।

যেমন বেলঘরিয়ার তনুশ্রী রায়ের কথাই ধরা যাক। শনিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ বরাহনগর থেকে একটি ওলা বুক করেন তনুশ্রী। চালক ফোনে বলেন, তিনি দূরে আছেন। যেতে পারবেন না। তনুশ্রীর অভিযোগ, তিনি রাইড ক্যানসেল করার ঠিক আগে চালক ফের ফোন করে ঠিকানাটা আর এক বার জানাতে বলেন। তিনি দ্রুত পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। এর মিনিট সাতেক পরেও চালকের পাত্তা না পেয়ে যাত্রা বাতিল করেন তনুশ্রী । সঙ্গে সঙ্গেই ওলা কর্তৃপক্ষ এসএমএস-এ জানান, তনুশ্রীর পরবর্তী রাইডে ক্যানসেলশন ফি বাবদ অতিরিক্ত ৫০ টাকা কেটে নেওয়া হবে। পুরো বিষয়টি জানিয়ে ওলা কর্তৃপক্ষকে ই-মেলে অভিযোগ পাঠান ওই যাত্রী। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরেও তার কোনও জবাব আসেনি। তনুশ্রীর কথায়, ‘‘ওলা চালকেরা রাত হলেই যেতে চান না। বাধ্য হয়ে বুকিং বাতিল করতে হয়। এ বার সে জন্যও যদি অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, তা হলে সাধারণ ট্যাক্সির সঙ্গে এদের আর কী ফারাক রইল?’’

তনুশ্রীর মতোই অভিজ্ঞতা অর্পন চক্রবর্তীর। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বেকবাগান থেকে বিমানবন্দর যেতে উবের বুক করেন অর্পণবাবু। তাঁর অভিযোগ, উবের চালক প্রথম দু’বার ফোন ধরেননি। পরে ফোনে চালক জানান, তিনি যেতে পারবেন না এবং রাইড বাতিল করতে অনুরোধ করেন। ক্যানসেল করতেই উবের কর্তৃপক্ষ জানান, পরবর্তী রাইডে অতিরিক্ত ৬০ টাকা কাটা হবে। অর্পণবাবু উবের কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও ফল পাননি।

অনৈতিক ভাবে ‘ক্যানসেলেশন ফি’ নেওয়া হচ্ছে, এ কথা মানতে নারাজ ওলা এবং উবের কর্তৃপক্ষ। উবেরের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনৈতিক ভাবে গ্রাহকের থেকে ক্যানসেলেশন ফি নেওয়া হলে, তা অবশ্যই কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবেন। দরকার হলে অতিরিক্ত নেওয়া টাকা ফেরতের ব্যবস্থাও করা হবে।’’ একই দাবি করা হয়েছে ওলা-র তরফেও।

তবে বাস্তবে সেই ফেরত আর জুটছে না বলেই জানাচ্ছেন যাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ola and Uber Cancellation fee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE