Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
প্রশ্নের মুখে প্রশাসন

মরণ-ঝুঁকি নিয়েই শহরে বহু অটো চলছে কাটা-গ্যাসে

কাটা-তেলে অটো চলার সময়ে বায়ু দূষণ ছিল সব থেকে বড় বিপদ। এখন আবার বহু অটো চলছে কাটা-গ্যাসে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এর থেকে যে কোনও মুহূর্তে বিস্ফোরণ বা অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া কাটা-গ্যাস অর্থাৎ রান্নার গ্যাসে অটো চললে বায়ু দূষণ থেকেও নিস্তার নেই বলে জানাচ্ছেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি), হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ম (এইচপি) ও ভারত পেট্রোলিয়মের (বিপিসিএল) মতো রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থার বিশেষজ্ঞরা।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

কাটা-তেলে অটো চলার সময়ে বায়ু দূষণ ছিল সব থেকে বড় বিপদ। এখন আবার বহু অটো চলছে কাটা-গ্যাসে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এর থেকে যে কোনও মুহূর্তে বিস্ফোরণ বা অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া কাটা-গ্যাস অর্থাৎ রান্নার গ্যাসে অটো চললে বায়ু দূষণ থেকেও নিস্তার নেই বলে জানাচ্ছেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি), হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ম (এইচপি) ও ভারত পেট্রোলিয়মের (বিপিসিএল) মতো রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থার বিশেষজ্ঞরা। সংস্থাগুলির অভিযোগ, খাস কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় কাটা গ্যাসে বহু অটো চললেও এই অবৈধ কারবার বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসন উদ্যোগী নয়। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে এই বিপদ সম্পর্কে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়ান অটো এলপিজি কোয়ালিশন’।

হরিয়ানার সদর দফতর থেকে ওই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুযশ গুপ্ত দু’পাতার চিঠিতে আর্জি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী যাতে অবিলম্বে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে কঠোর ব্যবস্থা নেন।

এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও রুজু করা হয়েছে। মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, যে ভাবে আনাড়ি হাতে, সাবধানতা না নিয়ে চোরাই সিলিন্ডার থেকে অটোর জ্বালানি-ট্যাঙ্কে রান্নার গ্যাস ভরা হয়, তা বেআইনি ও ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ভুলেই বিস্ফোরণ ঘটে প্রাণহানি ও সম্পত্তি নষ্ট হতে পারে। কাটা-গ্যাসে চলা অটো যে বায়ু দূষণও ছড়াচ্ছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই আবেদনে। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের একাংশ চোরা পথে সরিয়ে যারা এই বেআইনি কারবারে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে আবেদন জানানো হয়েছে। অগস্টের গোড়ায় ওই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।

শনিবার রাতেই পুলিশ দক্ষিণ শহরতলির সোনারপুর, কামালগাজি ও নরেন্দ্রপুরে কাটা-গ্যাসের এক বড় চক্রের হদিস পেয়েছে। শহরের কোথায় কোথায় এই ব্যবসা চলছে, খোঁজ চলছে তারও। বিটি রোডের কিছু জায়গাতেও রমরমিয়ে এই কারবার চলছে বলে প্রাথমিক ভাবে শনাক্ত করেছে পুলিশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থাগুলির বক্তব্য, এই বিপজ্জনক কারবারে প্রথম বিপদ হতে পারে সিলিন্ডার থেকে পাম্প করে নল দিয়ে রান্নার গ্যাস অটোর জ্বালানি ট্যাঙ্কে ভরার সময়ে। কারণ, বাতাসের সংস্পর্শে লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) একটি বিস্ফোরক মিশ্রণ তৈরি করে এবং একটি মাত্র স্ফুলিঙ্গ থেকেই বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে জ্বালানি-ট্যাঙ্কে এলপিজি ভরার সময়ে সিলিন্ডার, নল ও ফুয়েল-ট্যাঙ্ক যে কোনওটি থেকে গ্যাস লিক হয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

দ্বিতীয়ত, অটো-এলপিজি স্টেশনে ওই গ্যাস ভরার সময়ে অটোর জ্বালানি-ট্যাঙ্কের ১৫ শতাংশ জায়গা নিয়ম মেনে খালি রাখা হয়। যাতে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে এলপিজি-র প্রসারণ হলেও ওই বাড়তি জায়গায় তা ধরে যায়। কিন্তু ‘কাঁচা’ পদ্ধতিতে সিলিন্ডার থেকে পাম্প করে অটোয় এলপিজি ভরার সময়ে পুরো ট্যাঙ্ক ভর্তি করা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, তাপমাত্রা খুব বেশি হলে ট্যাঙ্ক অতিরিক্ত পরিমাণে ভর্তি করার সময়ে বা ট্যাঙ্কে অতিরিক্ত গ্যাস নিয়ে অটো চালানোর সময়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

রান্নার গ্যাসে অটো চললে বায়ু দূষণ হবে কেন?

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দুটোই এলপিজি হলেও এক ধরনের নয়। এলপিজি-র দুই উপাদান বুটেন ও প্রপেন অটোর ক্ষেত্রে ৫০:৫০ অনুপাতে থাকে। কিন্তু কুকিং এলপিজি বা রান্নার গ্যাসে বুটেন ও প্রপেনের অনুপাত ৭০:৩০। রান্নার গ্যাসে ক্ষতিকর হাইড্রোকার্বনও থাকে। কিন্তু রান্নার গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে বা খোলা অবস্থায় পুড়ে যায় বলে ওই হাইড্রোকার্বন বাতাসে মিশে যেতে পারে না। কিন্তু হাইড্রোকার্বন যুক্ত রান্নার গ্যাসে অটো চললে তা ইঞ্জিনের মধ্যেই পোড়ে এবং হাইড্রোকার্বন জমা হয় গাড়ির ইঞ্জিনে। ফলে বাতাসে তৈরি হয় কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস।

পুলিশ জেনেছে, কিলোগ্রাম-প্রতি কাটা গ্যাসের দাম পড়ে ৬০ টাকা পর্যন্ত। অন্য দিকে, বাজারে অটো এলপিজি-র লিটার প্রতি দাম প্রায় ৫০ টাকা। অর্থাৎ কেজি প্রতি প্রায় ৯০ টাকা। চোরাই রান্নার গ্যাসে বেআইনি ভাবে অটো চালিয়ে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা সাশ্রয় করছেন অটো মালিক বা চালকেরা। কিন্তু বাড়ছে ঝুঁকি ও দূষণ এবং কমছে সেই সব অটোগুলির আয়ু।

কাটা-তেলে চলা অটো বন্ধ করে এলপিজি-চালিত অটো বাধ্যতামূলক করার পিছনে অনেকটা অবদান ছিল পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের রুজু করা জনস্বার্থ মামলার। তাঁর আক্ষেপ, “কাটা-গ্যাসের অটোতে ফের বায়ু দূষণ ফিরে এল। তার উপরে বিস্ফোরণের ফলে মুহূর্তে প্রাণহানির আশঙ্কাও আছে। তা হলে এত কিছু করে কী লাভ হল?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE