Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নার্সের মৃত্যুতে অভিযুক্ত আমরি

সল্টলেক আমরি হাসপাতালে এই ঘটনা জানাজানির পরেই এ দিন দুপুর থেকে ধুন্ধুমার শুরু হয় হাসপাতাল চত্বরে। কর্মীদের একাংশ তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। চাপান-উতোর গড়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়।

উমা সেস।

উমা সেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪৪
Share: Save:

অভিযুক্ত—বেসরকারি হাসপাতাল।

মৃত—ওই হাসপাতালেরই নার্স।

অভিযোগকারী—হাসপাতালের অন্য নার্সরা।

নজিরবিহীন ভাবে এ বার কলকাতার এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতিতে ওই হাসপাতালেরই এক নার্সের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

উমা সেস (২৬) নামে ওই নার্সের মৃত্যুর পরে হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন তাঁর সহকর্মী ওই হাসপাতালেরই অন্য নার্সেরা। তাঁরা দাবি করেছেন, উমাকে ন্যূনতম চিকিৎসা না দিয়ে ইমার্জেন্সিতে ফেলে রাখা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় হলেও নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে ৭টা ৪৪ মিনিটে তাঁর দেহ আইসিইউ-তে ঢুকিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ! বাইরে প্রচার করা হয়, আইসিইউতে চিকিৎসা চলাকালীন ওই নার্সের মৃত্যু হয়েছে। নিজেদের এই অভিযোগ লিফলেট আকারে ছাপিয়ে নার্সেরা এ দিন তা বিলিও করেছেন।

সল্টলেক আমরি হাসপাতালে এই ঘটনা জানাজানির পরেই এ দিন দুপুর থেকে ধুন্ধুমার শুরু হয়
হাসপাতাল চত্বরে। কর্মীদের একাংশ তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। চাপান-উতোর গড়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়।

হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া বলেছেন, ‘‘তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। যদি সত্যি কারও অপরাধ প্রমাণিত হয়, তা হলে কড়া শাস্তি হবে। কোনও রেয়াত করা হবে না। কেউ অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা শুরু করাটাই হাসপাতালের নীতি। কেউ যদি তা লঙ্ঘন করে থাকেন, তা হলে ব্যক্তিগত ভাবে করেছেন। এটা হাসপাতালের সিদ্ধান্ত নয়।’’ যদিও এ দিন বিকেলেই কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট তুলিকা রায় এবং মেডিক্যাল অফিসার অনিন্দ্য সরকারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় গাফিলতি এবং অত্যধিক বিল নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই টাউন হলের বৈঠকে হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে রাজ্যে তৈরি হয় নতুন স্বাস্থ্য কমিশন। তারই মধ্যে অ্যাপোলো হাসপাতালে একাধিক চিকিৎসা গাফিলতির ঘটনায় বিস্তর বিতর্ক হয়। কমিশন শাস্তিও ঘোষণা করে। আমরি-র এই ঘটনা বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ঘিরে সমালোচনাকে ফের নতুন করে উস্কে দিল। বিশেষ করে এ দিনের ঘটনায় খোদ হাসপাতালের নার্সেরা যে ভাবে হাসপাতালের গাফিলতির অভিযোগ সামনে এনেছেন, তাতে স্বাস্থ্য কমিশন ও রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কর্তারাও স্তম্ভিত।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওড়িশার বাসিন্দা উমা গত চার বছর ধরে আমরিতে কাজ করছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে মাথার যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। অভিযোগ, তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চাইলে ছুটি মেলেনি। বুধবার তিনি রাতের ডিউটিতে যোগ দেন। কিন্তু রাত ন’টার পর থেকেই মাথার যন্ত্রণা খুব বেড়ে যায়। রাত দুটো নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন উমা।

তাঁর সহকর্মীদের অভিযোগ, তাঁকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, অবিলম্বে মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করাতে হবে। কিন্তু নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেট তুলিকা রায় নির্দেশ দেন, ইএসআই হাসপাতালেই উমার চিকিৎসা করাতে হবে। আমরিতে তাঁর চিকিৎসা করার ‘অনুমতি’ নেই! উমাকে রাতের মতো নজরদারিতে রাখার পরামর্শ দেন তিনি। নার্সদের অভিযোগ, চিকিৎসকেরা উমাকে সিটি স্ক্যান করাতে বললেও কর্তৃপক্ষ তা করাননি। সকাল সাড়ে সাতটায় কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় তাঁর। যদিও নার্সদের অভিযোগ, এর পরে বিতর্ক এড়ানোর জন্য উমাকে আইসিইউ-তে ঢোকানো হয়।


বিক্ষোভ: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে নার্সের মৃত্যুর অভিযোগে প্রতিবাদী জমায়েত। বৃহস্পতিবার, সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে কর্মরত এক নার্স বলেন, ‘‘রাস্তায় কেউ অসুস্থ হলেও তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করি আমরা। অথচ যে জায়গায় এত দিন কাজ করেছে, সেই হাসপাতালেই চিকিৎসা পেল না উমা। বিনা চিকিৎসায় সহকর্মীর এই মৃত্যু মানতে পারছি না। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’’

কর্মীদের দাবি, এ দিন বিক্ষোভ চলাকালীন হাসপাতালের মানবসম্পদ বিভাগের অফিসার গৌরব নাইয়ার তাঁদের বোঝাতে আসেন। অভিযোগ, ওই আধিকারিক তাঁদের জানান, আমরিতে কর্মীদের চিকিৎসা হয় না, ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। এ কথা শোনার পরে সকলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ধাক্কাধাক্কি হয়, তাতে ওই আধিকারিক পড়ে যান। তাঁর মাথা ফেটে যায়।

গোলমালের খবর পেয়ে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও গাফিলতির অভিযোগ জমা পড়েনি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, এক মাস আগেই উমার বাবা মারা যান। তাঁর বাড়িতে মা এবং ছোট ভাই রয়েছেন। ফলে সংসারের সব দায়িত্ব তাঁর উপরেই ছিল। আমরির চুক্তিভিত্তিক কর্মী ইউনিয়নের সভানেত্রী তথা সল্টলেকের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুলসী সিংহ রায় জানিয়েছেন, এমন অমানবিক ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE