Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রোগীর গয়না হাতিয়ে গ্রেফতার আয়া

রোগীর অবর্তমানে তাঁর গয়না পরে বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আয়া। তিনি কেন এই কাজ করছেন তা জানতে চাওয়ায় রোগীর স্বামী উত্তর পেয়েছিলেন, ‘‘গয়না গায়ে পরে থাকলে তা চুরি যাওয়ার ভয় থাকে না!’’

ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন সঞ্জয়বাবু। পাশে স্ত্রী রমা। (ইনসেটে) চুরি যাওয়া গয়নার বটুয়া। নিজস্ব চিত্র

ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন সঞ্জয়বাবু। পাশে স্ত্রী রমা। (ইনসেটে) চুরি যাওয়া গয়নার বটুয়া। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:১২
Share: Save:

রোগীর অবর্তমানে তাঁর গয়না পরে বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আয়া। তিনি কেন এই কাজ করছেন তা জানতে চাওয়ায় রোগীর স্বামী উত্তর পেয়েছিলেন, ‘‘গয়না গায়ে পরে থাকলে তা চুরি যাওয়ার ভয় থাকে না!’’ যদিও নিরাপত্তা নয়, মানিকতলা থানার পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, চুরির জন্যই ওই গয়না পরে ঘুরতেন আয়া।

বুধবার রাতে বাগুইআটি এলাকা থেকে মীরা হাজারি নামে ওই আয়াকে গ্রেফতার করেছে মানিকতলা থানার পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অসুস্থ স্ত্রীয়ের গয়না চুরির অভিযোগ করেছেন উল্টোডাঙা হাডকো এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় চৌধুরী। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর কাছে প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না উদ্ধার হয়েছে। এ দিন শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে মীরাকে চার দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

সঞ্জয়বাবু বৃহস্পতিবার জানান, ২০০১ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় তাঁর স্ত্রী রমা-র। তাঁকে লেক টাউনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ৪০ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফেরেন রমাদেবী। সেই সময় হাসপাতালের মেট্রনকে বলে স্ত্রীর পরিচর্যার জন্য চার জন আয়ার ব্যবস্থা করেন সঞ্জয়বাবু। তাঁরা সঞ্জয়বাবুর বাড়িতেই রমাদেবীর দেখাশোনা করতেন। তাঁদেরই এক জন মীরা। বিগত কয়েক বছরে নতুন আয়ারা এলেও মীরার কাজে বদল হয়নি। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘পুরনো হওয়ায় মীরার উপরেই আমরা বেশি ভরসা করতাম। একটা বটুয়ায় রমা-র সোনার গয়না থাকত। সময় মতো মীরাই তা পরিয়ে দিত, খুলে রাখত। সেই সুযোগেই সব চুরি করেছে।’’

সতর্ক হতে

• আয়ার নাম, ঠিকানা, ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের ফটোকপি থানায় জমা দিতে হবে।

• হাসপাতাল বা আয়া সেন্টার থেকে আয়া নিলে সেই হাসপাতাল ও সেন্টারের নাম, ঠিকানা ও মালিকের ফোন নম্বর স্থানীয় থানায় জমা
দিতে হবে।

• সেন্টার বা হাসপাতালে ওই আয়ার নাম নথিভুক্ত কি না, জেনে নিতে হবে।

• ঠিকানা জানার পরে ওই ঠিকানায় আয়া থাকেন কি না, তা-ও যাচাই করা জরুরি।

সঞ্জয়বাবু জানান, জানুয়ারি মাসে ফের রমাদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। মার্চ মাসের শুরুতে মীরা হঠাৎ জানান, রমাদেবীর বটুয়া থেকে কয়েকটি গয়না চুরি গিয়েছে। তিনি তাঁর হিসেব পাচ্ছেন না। আরও জানান, তাঁর সন্দেহ বাকি তিন জন আয়ার মধ্যে থেকে কেউ এই কাজ করেছেন। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘সকলকে বসিয়ে এক দিন কথাও বললাম। কিন্তু, কেউ চুরির কথা স্বীকার করেননি। এর পর অন্য এক আয়া জানান, রমা যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তখন মীরাকে তাঁরা রমার গয়না পরে ঘুরতে দেখেছেন।’’ এর পরেই মীরাকে সঞ্জয়বাবু প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, ‘‘গয়না পরে থাকলে তা নিরাপদ থাকে।’’ যদিও তার পর থেকে মীরা আর কাজে আসেননি বলে অভিযোগ।

গত মঙ্গলবার মানিকতলা থানায় অভিযোগ করেন সঞ্জয়বাবু। মানিকতলা থানার পাশাপাশি তদন্তে নামে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। সঞ্জয়বাবুর বাড়ির সদস্যদের এবং পরিচারিকাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মানিকতলা থানার এক আধিকারিক জানান, মীরার ঠিকানা বলতে পারেননি সঞ্জয়বাবু। তাঁর কোনও তথ্যই সঞ্জয়বাবুদের কাছে ছিল না। তবে রাত হলে একটি বিশেষ ট্যাক্সিতে বাড়ি যেতেন মীরা। ওই ট্যাক্সি চালককে ফোন করে সঞ্জয়বাবুই ডেকে দিতেন। তাঁর ফোন নম্বর পুলিশকে দেন সঞ্জয়বাবু। পুলিশ ওই চালকের সূত্র ধরেই মীরাদের বাড়িতে পৌঁছয়। সোনার গয়না-সহ গ্রেফতার হন মীরা। তবে তাঁর স্বামী এ দিন রাত পর্যন্ত পলাতক বলে পুলিশ জানায়।

রোগীর পরিচর্যার জন্য বহু বাড়িতেই আয়া রাখা হয়। তাঁদের কাজে বহাল করার আগে ঠিক কোন কোন বিষয় খতিয়ে দেখে নেওয়া উচিত এই ঘটনায় ফের সেই প্রশ্ন উঠছে। অনেকের দাবি, আয়া সেন্টার থেকে নিয়োগ করলে আয়াদের তথ্য ওই সেন্টার থেকেই পাওয়া যায়। কিন্তু, মীরাকে কোনও সেন্টার থেকে নিয়োগ করা হয়নি। ফলে কোনও তথ্যই ছিল না সঞ্জয়বাবুর কাছে। হারানো সোনা ফিরে পেয়ে তিনি এখন বলছেন, ‘‘এ বার থেকে সতর্ক হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrested Stealing Nursemaid Jewellery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE