Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নারদ রুখতে জোড়া ফলা

ক্যামেরা অফ। সাউন্ড অফ। সোমবার পুরসভার বাজেট নিয়ে আলোচনা পর্বে বিতর্ক এড়াতে এমনই সিদ্ধান্ত নিলেন অধিবেশন কক্ষের চেয়ারপার্সন মালা রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০২:৫১
Share: Save:

ক্যামেরা অফ। সাউন্ড অফ।

সোমবার পুরসভার বাজেট নিয়ে আলোচনা পর্বে বিতর্ক এড়াতে এমনই সিদ্ধান্ত নিলেন অধিবেশন কক্ষের চেয়ারপার্সন মালা রায়। যা ঘিরে এ দিন পুরসভার আনাচ-কানাচে একটাই আলোচনা, ঘুষ-কাণ্ড প্রসঙ্গ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বিরোধীপক্ষ ফের বিব্রত করতে পারে বলেই সতর্ক পুর প্রশাসন। পুরসভার ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলেই জানালেন একাধিক পুর আধিকারিক এবং প্রবীণ কাউন্সিলরও।

বিরোধী কাউন্সিলরদের হট্টগোলে শনিবার বাজেট বক্তৃতা স্বস্তিতে পড়তেই পারেননি মেয়র। উল্টে ঘুষ-কাণ্ডে তাঁর যোগ রয়েছে এই অভিযোগ তুলে বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা অধিবেশন কক্ষে তুমুল হইচই করেন। শাসক দলের কাউন্সিলরেরা তাঁদের থামাতে ওয়েলে নেমে পড়েন। দু’পক্ষের ধস্তাধস্তির সেই চিত্র ধরা পড়ে প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। সোমবার বাজেট বিতর্কে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তাই অধিবেশন কক্ষে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা ঢোকাই বন্ধ করে দিল পুর প্রশাসন। চেয়ারপার্সন মালা রায়ের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ক্যামেরা দেখে অতি উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারেন কাউন্সিলরেরা। তাই এই নিষেধাজ্ঞা।’’

এ দিন দুপুর ১২টায় বাজেট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অধিবেশন কক্ষে ঢোকার সময়ে পুরসভার জনসংযোগ দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া সংবাদমাধ্যমের আলোকচিত্রীরা প্রবেশ করতে পারবেন না। তা নিয়ে শাসক দলের একাধিক কাউন্সিলরও স্তম্ভিত। কার নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে চলে চর্চা। তার আঁচ মেলে অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেও। শাসক দলের হয়ে মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বাজেটের পক্ষে সওয়াল করেন। টেবিল চাপড়ে তা সমর্থন করেন শাসক দলের সকলে। তখনও সাউন্ড অন। মাইকের সুর কাটে ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরএসপি-র দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য চলার সময়ে। বাজেট প্রসঙ্গে কথা বলার ফাঁকে হঠাৎই তিনি বলে বসেন, ঘুষ-কাণ্ডে জড়িত মেয়র বাজেট বক্ততা দিয়েছেন। বাজেটের প্রক্রিয়ায় তাঁর যুক্ত থাকার কোনও অধিকার নেই। ব্যস। জোর হট্টগোল শুরু হয়। তিনি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ততক্ষণে চেয়ারপার্সনের নির্দেশে তাঁর মাইকের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কেন সাউন্ড অফ, তা নিয়ে আর এক প্রসস্ত হইচই চালায় বিরোধীরা। শাসক বনাম বিরোধীদের কথা কাটাকাটি চলে কয়েক মিনিট ধরে। তবে বিরোধীদের কথায় কর্ণপাত করেননি মালা রায়। নারদ প্রসঙ্গ বন্ধ হতেই ফের মাইকের সংযোগ দেওয়া হয়। যা কিছু ঘটে অধিবেশনের প্রথমার্ধে।

কেন ক্যামেরা নিষিদ্ধ করা হল জানতে চাইলে মালাদেবী বলেন, ‘‘ক্যামেরা দেখে কাউন্সিলরেরা উত্তেজিত হয়ে এমন কিছু আচরণ করে ফেলতে পারেন, যাতে বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।’’ সে সব ভেবেই সাময়িক ভাবে ক্যামেরা ঢোকা বারণ করা হয়েছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘অতীতেও এক মেয়র তাঁর ঘরে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ায় সম্মতি দেননি। পুরসভায় এমন হয়েছে।’’

এ দিন অধিবেশনে পুরসভায় ইউনিট ট্যাক্স, বিপজ্জনক বাড়ির সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে পুরবোর্ডের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য রাউথ, অরূপ চক্রবর্তীর এবং
সন্দীপন সাহারা।

শহরের বস্তির বেহাল দশার কথা তুলে সরব হন সিপিএমের বিলকিস বেগম। বক্তব্যের শেষ লগ্নে এসে ফের নারদের দুর্নীতির নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি। তৈরিই ছিলেন চেয়ারপার্সন মালা রায়। ফের এক দফা সাউন্ড অফ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narada issue Ruling Party TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE