প্রতীকী ছবি।
জননীর পরিত্যক্ত সে।
কোনও নাম নেই তার।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে গত এক বছর ধরে শুধু অপেক্ষা করছে শেষের সে দিনের জন্য। দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে ফেলে যাওয়া ১৪ মাসের এই শিশুপুত্রকে শুধু মায়ায় জড়িয়ে রেখেছেন এসএসকেএম হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (নিকু) চিকিৎসক, নার্সেরা।
মাথায় গঠনগত সমস্যা রয়েছে শিশুটির। চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ‘হাইড্রোসেফালাস’। মস্তিষ্ক থেকে যে দেহরস শিরদাঁড়ায় যাওয়ার কথা, তা যাওয়ার পথ না পেয়ে জমতে থাকে মাথার ভিতরে। শিশুর মাথার আকৃতি অসম্ভব বড় হতে শুরু করে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত বছরের অগস্ট মাস নাগাদ শিশুটির বাবা-মা এসে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে যান তাকে। প্রথম দিকে নিয়মিত এলেও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে বাবা-মায়ের যাতায়াত। তখন প্রায় দু’মাসের ওই শিশুটির উপরে অস্ত্রোপচার করা যায়নি। অপেক্ষা করছিলেন চিকিৎসকেরা। গত বছরের ২৪ নভেম্বর তার বাবা-মা এসে শিশুটিকে বন্ড দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে চান। খাতায়-কলমে শিশুটিকে ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু বাবা-মা সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। তবে থেকে রয়ে যায় শিশুটি। বাবা-মা বন্ধ করে দেন যাতায়াত।
যে ঠিকানা দিয়ে, মায়ের নাম করে অনামী ওই শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিল, সেই ঠিকানায় বারবার পুলিশ পাঠিয়েও খোঁজ পাওয়া যায়নি দম্পতির। যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তা-ও অকেজো হয়ে যায়। এসএসকেএমের অধ্যক্ষ অজয় রায় বলেন, ‘‘আমরা তো ফেলে দিতে পারি না। তাই সেই থেকে শিশুটি আমাদের এখানেই রয়েছে।’’
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, নিকু-র বিছানায় শুয়ে থাকা শিশুটির নাকে নল পরিয়ে দুধ খাওয়ানো হয় নিয়মিত। সে ভাল করে চোখে দেখতে পায় না। কানে শুনতেও পায় না। খুব কাছে গিয়ে বললে শোনে। কাছের জিনিস দেখে। ভারী হয়ে ওঠা মাথার জন্য নিজে থেকে সে পাশও ফিরতেও পারে না। শুধু হাত-পা নাড়ে। মাঝেমধ্যে কেঁদে ওঠে।
সুস্থ হয়ে ওঠার কোনও সম্ভাবনা নেই? চিকিৎসকদের বক্তব্য, ‘‘অস্ত্রোপচার করা গেলে হয়তো কিছু দিনের জন্য স্বস্তি পাবে সে। কিন্তু বাবা-মায়ের অনুমতি না পেলে সেই অস্ত্রোপচারও সম্ভব নয়।’’ তা ছাড়া শুধু একটা অস্ত্রোপচার নয়। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও দেখভালের প্রয়োজন। প্রশ্ন উঠেছে, কে নেবে সেই দায়িত্ব?
ফলে ও ভাবেই পড়ে রয়েছে সে। এখন নতুন একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিকু-র যে শয্যা রয়েছে, তার আকৃতিগুলি তুলনায় ছোট। এই শিশুপুত্রের মাথাটা এখন এতটাই বড় হয়ে গিয়েছে যে, ছোট সেই শয্যায় অসুবিধা হচ্ছে তার। অজয়বাবুর কথায়, ‘‘তা ছাড়া নিকু-র শয্যা এমনিতে পাওয়া যায় না। যে শিশুর অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক তাকে ভর্তি করা যাচ্ছে না।’’
সাধারণ ওয়ার্ডে সরিয়েই নিয়ে যাওয়া যায় শিশুটিকে। কিন্তু নিকু-তে যে ভাবে নার্সেরা তার দেখভাল করছে, জেনারেল ওয়ার্ডে শিশুর সংখ্যা এত বেশি যে সেটা সম্ভব হবে না। ফলে আতান্তরে হাসপাতাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy