আলোচনা: প্রধান শিক্ষিকাদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
একই স্কুল ভবনে দু’টি স্বতন্ত্র বিভাগ। দুই বিভাগের দুই প্রধান শিক্ষিকার দ্বন্দ্ব ক্লাসঘর ঘিরে। তা মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হল খোদ শিক্ষামন্ত্রীকে! সমস্যা সমাধানে বদলে দেওয়া হল স্কুলের চরিত্রই। ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়ের দুই বিভাগের দুই প্রধান শিক্ষিকা এবং কলকাতার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্নাকে নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে মন্ত্রী জানান, ওই স্কুলকে ‘ইন্টিগ্রেটেড’ তকমা দেওয়া তিনি নীতিগত ভাবে সমর্থন করেন। অর্থাৎ, একই স্কুলে প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ থাকলেও প্রধান শিক্ষিকা থাকবেন এক জনই।
স্কুল সূত্রের খবর, ১৯৩৮ সালে স্কুলটিতে উচ্চ প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের পঠনপাঠন শুরু হয়। ৬০-এর দশকে যোগ হয় প্রাথমিক বিভাগ। পরে দু’টি পৃথক বোর্ড তৈরি হলে একই বাড়িতে দু’টি স্বতন্ত্র বিভাগ গড়ে ওঠে। সম্প্রতি ক্লাসঘরকে কেন্দ্র করে ওই দুই বিভাগের প্রধান শিক্ষিকার টানাপড়েন শুরু হয়। ঘর না পেয়ে মেঝেতেই ক্লাস করতে বাধ্য হয় প্রাথমিকের পড়ুয়ারা। তারই প্রতিবাদে গত সোমবার স্কুলে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা।
দুই প্রধান শিক্ষিকা একে অপরের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছিলেন। প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা ঝর্না সরকারের অভিযোগ ছিল, ক্লাসঘর থাকা সত্ত্বেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায় সেখানে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। অন্য দিকে দীপান্বিতাদেবী দাবি করেন, তাঁকে পড়ুয়ার সংখ্যা জানানোই হয়নি। মঙ্গলবার সকালেও উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের একাংশ স্কুলে গিয়েছিলেন। তার পরেই সমস্যা সমাধানে মন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন।
এ দিন বৈঠক শেষে পার্থবাবু জানান, স্কুলে পরিচালন সমিতি না থাকায় প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রাথমিক স্তরের এক জন সাব ইনস্পেক্টর (এসআই)। তাঁকে সরিয়ে কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) শুভ্রা ভট্টাচার্যকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হল। প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করবেন দীপান্বিতাদেবী। প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা ঝর্না সরকার ওই বিভাগেরই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা (টিআইসি) হিসেবে নিযুক্ত হলেন।
ওই স্কুলেই প্রাক্ প্রাথমিক স্তরের একটি বেসরকারি স্কুল চলে। সেটি নিয়ে পার্থবাবু বলেন, ‘‘সরকারের কাছে এর কোনও খবর ছিল না।’’ ওই স্কুলটিতে স্বাভাবিক ভাবেই পঠনপাঠন চলবে বলে জানান তিনি।
প্রাথমিক বিভাগ সকাল সাড়ে ছ’টায় শুরু হয়ে শেষ হয় সাড়ে দশটায়। এর ফলে উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের অসুবিধা হবে না বলেই আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। যদিও তিনি দুই প্রধান শিক্ষিকার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কথা মেনে নিয়েছেন। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘এত বড় স্কুলে কেন পডুয়াদের মেঝেয় বসতে হবে?’’ দীপান্বিতাদেবী বলেন, ‘‘সর্ষের মধ্যেই ভূত ছিল। মন্ত্রী তা বুঝতে পেরেছেন।’’ আর ঝর্নাদেবীর বক্তব্য, ‘‘পড়ুয়াদের আর মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হবে না। এটাই শান্তির।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy