দিশাহারা: উদ্বেগ, আতঙ্কের ছায়া মেডিক্যালের প্রসূতি বিভাগে। মঙ্গলবার বিকেলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
সকাল থেকে তাঁর ছেলেটার শরীর ভাল নেই। তিন দিন বয়সী শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে তবু বাড়ি ফিরে যাওয়াটাই নিরাপদ মনে করছেন রাজারহাটের গৌরী সর্দার। তাঁর কথায়, ‘‘স্রেফ পালিয়ে যাচ্ছি। আজ যা হল, তার পর আর এখানে থাকার সাহস নেই।’’
মঙ্গলবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিশুচুরির ঘটনার পরে দিনভর এই আতঙ্কের ছবিই দেখা গিয়েছে। কেউ ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে আগেভাগে চলে গিয়েছেন। কেউ বা বন্ডে সই করে কোনও মতে পড়িমরি করে ছুটেছেন বাড়ির দিকে। সকলেরই বক্তব্য কম-বেশি একটাই। এই ঘটনার পরে আর মেডিক্যালে বাচ্চাকে রাখা যাবে না।
হুগলির জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা স্বপন ঘোষের স্ত্রী ভর্তি রয়েছেন শনিবার থেকে। রবিবার মেয়ে হয়েছে তাঁদের। বিকেলে ব্যাগ গুছিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু আরও দু’দিন রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এর পর আর কোন সাহসে এখানে রাখব?’’ একই বক্তব্য বাগমারির উজ্জ্বল দাসেরও। তিন দিন আগে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। বললেন, ‘‘আগে শুনেছিলাম সরকারি হাসপাতালে বাচ্চা বদল হয়ে যায়। এখন তো দেখছি অবস্থা তার থেকেও ভয়ঙ্কর। হাসপাতালের মধ্যে এত আয়া। তাদের মধ্যে থেকেও কেউ যদি কোনও বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায়, তাকে কে ঠেকাবে?’’
আরও পড়ুন: বাসের ধাক্কায় জখম প্রতিবন্ধী
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এর কোনও জবাব নেই। যে কোনও প্রশ্নের জবাবেই সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘‘যা জানানোর স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়েছি’’ বলে দায় সেরেছেন।
এ দিন প্রসূতি ওয়ার্ডে আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিলেন প্রসূতিরা। সন্তানকে বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে শুয়ে থেকেছেন প্রায় সকলেই। হবু মায়েরা অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁদের সত্যিই যাওয়ার অন্য কোনও জায়গা নেই। কিন্তু যে সন্তান আসতে চলেছে, তাকে কতটা নিরাপত্তা দিতে পারবেন তাঁরা, সে নিয়ে আতঙ্ক তাঁদের এক মুহূর্ত তিষ্ঠোতে দিচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy