Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উদ্‌যাপনে মাতোয়ারা শহর, মাঠ ভরল জঞ্জালে

মদির রাতের স্খলিত মেজাজের সঙ্গে ছিটেফোঁটা মিল নেই বছরের প্রথম সকালের। সোমবার, ২০১৮-র প্রথম সূর্য ওঠার আগে ব্রাহ্মমূহূর্তই বলে দিল, দেশি-বিদেশি সব রকমের হুজুগে মাতলেও ইংরেজি নতুন বছরেও বাঙালি আসলে বাঙালিই রয়েছে।

ভিড়ের সঙ্গে উপচে পড়ল আবর্জনাও। চিড়িয়াখানায়।

ভিড়ের সঙ্গে উপচে পড়ল আবর্জনাও। চিড়িয়াখানায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

মদির রাতের স্খলিত মেজাজের সঙ্গে ছিটেফোঁটা মিল নেই বছরের প্রথম সকালের। সোমবার, ২০১৮-র প্রথম সূর্য ওঠার আগে ব্রাহ্মমূহূর্তই বলে দিল, দেশি-বিদেশি সব রকমের হুজুগে মাতলেও ইংরেজি নতুন বছরেও বাঙালি আসলে বাঙালিই রয়েছে।

পয়লা জানুয়ারি মানে বচ্ছরকার সঙ্কল্প ঝালিয়ে নেওয়ার দিন। তবে কাশীপুর উদ্যানবাটীর সামনে চিরাচরিত ভিড়টা বলল, এটা কল্পতরু দিবসের দিনও বটে। মানে ‘সবার চৈতন্য হোক’ বলে কল্পতরু হয়ে ওঠা রামকৃষ্ণকে মনে রেখে ভক্তদের বিশ্বাস উদ্‌যাপনের দিনও এটা। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে পুণ্যার্থীদের লাইনটা দেখা গেল বালি সেতু অবধি ছুঁয়ে ফেলেছে। এই ভিড়ের কথা মাথায় রেখেই দুপুরে ভবতারিণীকে ভোগ নিবেদনের পরে মন্দির বন্ধ করার রীতিতে খানিক কাটছাঁট করা হয়েছিল। দুপুরে মোটে আধ ঘণ্টা বন্ধ ছিল দক্ষিণেশ্বরের মন্দির।

ধর্মবিশ্বাসের সৌজন্যে চমৎকার একটা ছোট্ট পর্যটন অভিজ্ঞতাও হয়ে গেল অনেকের। দক্ষিণেশ্বর থেকে নৌকোয় গঙ্গাবিহার করে বেলুড় মঠে গিয়েছিলেন অনেকেই। কলকাতা বা কাছের মফস্সলের বাঙালিদের অনেকেই যে ভাবে পয়লা জানুয়ারি দিনটা কাটিয়ে থাকেন আর কী!

বছর শেষের রাত যদি শাসন করে কলকাতার যৌবন, নতুন বছরের প্রথম দিনটা বরাবরই আবাল-বৃদ্ধ-পারিবারিক বাঙালির। সত্তর পেরিয়ে এখন আর নিউ ইয়ার ইভের অত্যাচারের ধকল পোষায় না। পাইকপাড়ার চট্টোপাধ্যায় দম্পতিকে তাই দেখা গেল, সকাল সকাল অ্যাপ-ক্যাবে চড়ে দক্ষিণ কলকাতায় বন্ধুর বাড়ির আড্ডায় গিয়েছেন। সোমবার, কাজের দিনে অনেক অফিসই খোলা ছিল। তবে একসঙ্গে পারিবারিক জমায়েতের টানেও বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অনেকে। নিউ ইয়ার ইভের পার্টিতে যোগ দিতে না পারা অনেকে এ দিন দুপুরে বা সন্ধ্যায় রেস্তোরাঁয় পানভোজনে গিয়েছিলেন।

হারিয়ে যাওয়া শিশুকে মায়ের কাছে ফেরালেন পুলিশকর্মী। ইকো পার্কে।

এই সব উৎসবমুখর মানুষের সৌজন্যে ২০১৮-র প্রথম দিনটাও মোটামুটি যানজটেই কাটাল কলকাতা। ভিড়ের দাপটে আলিপুর চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল লাগোয়া এলাকায় গাড়ির গতি ছিল মন্থর। আলিপুর চিড়িয়াখানায় বরাবরই পয়লা জানুয়ারি মানে বাঁধভাঙা মানুষের ঢল। চিড়িয়াখানার অধিকর্তার আশিসকুমার সামন্ত জানালেন, এক লক্ষ ১০ হাজার লোকের ভিড় হয়েছিল। তবে গত বার এই ভিড় ছিল আরও হাজার দশেক বেশি। কিন্তু আশিসবাবুর মতে, ৩১ ডিসেম্বর ও নতুন বছরের প্রথম দিন মিলিয়ে দেখলে লোক এ বারই বেশি হয়েছে। আজকের কলকাতায় চিড়িয়াখানার কড়া চ্যালেঞ্জার হিসেবে অবশ্য উঠে এসেছে নিউ টাউনের ইকো-ট্যুরিজম পার্ক। এই শীতেই বেশ কয়েক বার ভিড়ের নিরিখে এগিয়ে গিয়েছে এই বিনোদন পার্ক। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘যা ভেবেছিলাম, পয়লা জানুয়ারিই সব থেকে বেশি ভিড় হবে! সেটাই হয়েছে।’’ ইকো পার্কে এ দিন এক লক্ষ ৩৮ হাজার লোক হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু। বছরের প্রথম দিন মানে বরাবরই বাঙালির কাছে কেক-কমলালেবুময় পিকনিকে সামিল হওয়ার দিন, ছোটদের নিয়ে সার্কাস দেখা বা ভিক্টোরিয়া-জাদুঘরে যাওয়ার দিন। তবে এ বছর সে সব ভিড় ছাপিয়ে গিয়েছে ইকো পার্কের জনজোয়ার। একাংশের মতে, এই বিনোদন পার্কে প্রবেশমূল্য খুবই সামান্য হওয়ায় ভিড় এতটা বেড়ে চলেছে। মাথা পিছু মাত্র ২০ টাকায় গোটা দিন কাটানো যায় ওই পার্কে। তবে বিশেষ বিশেষ দিনে ভিড় সামলাতে এই প্রবেশমূল্য কেন খানিকটা বাড়ানো হয় না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

তবে শহর যতই পাল্টাক, কিছু পুরনো অভ্যেস ছাড়তে পারেনি বাঙালি। বছরের প্রথম দিন ময়দান-চিড়িয়াখানা-ইকো পার্ক চত্বরে জঞ্জালে ছয়লাপ হওয়ার ছবিটা হতাশাজনক। নাগরিক সচেতনতার হুঁশ ফিরতে আরও ক’টা পয়লা জানুয়ারি লাগবে? আবির্ভাবেই সে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে ২০১৮।

সোমবার। ছবি: নিজস্ব চিত্র ও স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Year Celebration Garbage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE