Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তেড়ে আসছে দাঁত-নখ, ভয়ে কাঁটা ফিয়ার্স লেন

ঘুটঘুটে অন্ধকার সিঁড়ি। বোঁটকা গন্ধে টেকা দায়। দোতলার আধখোলা দরজার পাশে দু’টি নেড়ি কুকুর। চেহারায় বিশাল। অচেনা লোক দেখেই চিৎকার করে তেড়ে এল ওরা। পিছন থেকে ভেসে এল এক বৃদ্ধার তীক্ষ্ণ কণ্ঠ— ‘‘কৌন আয়া?

কুকুরের ‘তাড়া’য় পড়ে আহত মুন্নি খাতুন। — নিজস্ব চিত্র

কুকুরের ‘তাড়া’য় পড়ে আহত মুন্নি খাতুন। — নিজস্ব চিত্র

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৪
Share: Save:

ঘুটঘুটে অন্ধকার সিঁড়ি। বোঁটকা গন্ধে টেকা দায়। দোতলার আধখোলা দরজার পাশে দু’টি নেড়ি কুকুর। চেহারায় বিশাল। অচেনা লোক দেখেই চিৎকার করে তেড়ে এল ওরা। পিছন থেকে ভেসে এল এক বৃদ্ধার তীক্ষ্ণ কণ্ঠ— ‘‘কৌন আয়া? কিসকো মিলনা? সব মারনে আতে হ্যায় কুত্তাকো!’’ সঙ্গে গালাগাল। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল, ভিতরে দাপাচ্ছে আরও দু’টি নেড়ি কুকুর এবং খান আষ্টেক বেড়াল। কিছু শোনার আগেই আগন্তুককে তাড়িয়ে দিলেন বৃদ্ধা।

বৌবাজার অঞ্চলের ৬৭ নম্বর ফিয়ার্স লেনের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার নাম জুলেখা খাতুন। পোষ্যদের সৌজন্যে এলাকায় তিনি পরিচিত ‘বিল্লি মাসি’ হিসেবেই। এ হেন মাসি ও তাঁর পোষ্যদের নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ কম নয়। বাসিন্দারা পুলিশ কমিশনার ও ডিসি (সেন্ট্রাল)-র কাছে গণ-স্মারকলিপিও দিয়েছেন। অভিযোগের সর্বশেষ সংযোজন জুলেখার প্রতিবেশী মুন্নি খাতুনের অভিযোগ। বৌবাজার থানায় বছর পঁচিশের মুন্নি জানান, কুকুরের আক্রমণে রবিবার সিঁড়ি থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। চিবুকে ছ’টি সেলাই পড়েছে। ফেটেছে ঠোঁট। মুন্নির অভিযোগ পেয়ে এফআইআর দায়ের হলেও সোমবার রাত পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

মুন্নি জানান, মাস ছয়েক আগে বিহার থেকে কলকাতায় এসে ৬৭ নম্বর ফিয়ার্স লেনের একতলার ছোট্ট ঘরে স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ওঠেন তিনি। এই বাড়িতে আসা ইস্তক কুকুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ তাঁরা। আঁচড়-কামড়ের ঘটনা হামেশাই ঘটে। জুলেখার আদরের রকি-রাজা-টমির আতঙ্কে ঘর থেকে বেরোতেই সাহস পান না তাঁরা। রবিবার সকালে সিঁড়ির চাতালে দু’টি কুকুর তেড়ে আসে। ভয় পেয়ে সরতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যান তিনি। মুন্নি বলেন, ‘‘ব্যথায়-ভয়ে চিৎকার করছিলাম। প্রতিবেশী মহম্মদ ইউসুফ এসে বাঁচান। ছেড়ে দেওয়ার পরেও ওরা রাগে গরগর করছিল!’’

ফিয়ার্স লেন জুড়ে ‘বিল্লি মাসি’র পোষ্যদের নিয়ে এমন নানা আতঙ্কের কথা শোনা গিয়েছে। শনিবারই মুন্নির প্রতিবেশী, বছর তেরোর রহিমার পায়ে দাঁত বসিয়েছে জুলেখার এক পোষ্য। রহিমা বলল, ‘‘কী ভয়ে ভয়ে বেরোই, আমরাই জানি। টিউশনের স্যারেরাও কুকুরের ভয়ে আসেন না বাড়িতে।’’ মুন্নির বছর পাঁচেকের ছেলের পায়েও ক’দিন আগেই কামড়েছে বিল্লি মাসির কুকুর। মুন্নি বললেন, ‘‘এখানে বেশি দিন থাকলে বাচ্চাগুলো বাঁচবে না।’’

‘বিল্লি মাসি’ কবে থেকে ফিয়ার্স লেনে থাকেন, স্পষ্ট জানে না কেউ। এলাকার পুরনো বাসিন্দা আফতাব আহমেদ বললেন, ‘‘জন্ম থেকে ওঁকে দেখছি।।’’ সকলেই শুনেছেন, বিল্লি মাসির স্বামী, মেয়ে ছিল। কিন্তু ‘মেসোমশাই’ বহু দিন আগেই বাড়ি ছেড়েছেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁকে দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে জুলেখার এক ভাই দেখা আসেন।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, সমস্যা মেটানোর কি উপায় নেই? পুলিশ জানিয়েছে, এটা পুরনো সমস্যা। অভিযোগ ও পাল্টা-অভিযোগের জেরে পুলিশই জেরবার। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

মাস আটেক আগেই গড়িয়াহাটের অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা এক মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁর পায়রা পোষার শখে নোংরা ও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ প্রতিবেশীরা। সে বারও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। পশুপ্রেমী দেবশ্রী রায় বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, কুকুরগুলোকে নিশ্চয়ই ঘর থেকে বার করেন না ওই মহিলা। দীর্ঘদিন আটকে রাখলে, মানুষের সঙ্গে মিশতে না-দিলে ওরা হিংস্র হতে বাধ্য। কুকুরের কাজ কুকুর করেছে। এর দায় মালকিনেরই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dog rampage Phears lane
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE