Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়ো পরিচয়ে ২৯ বছর চাকরি মধ্যশিক্ষা পর্ষদে! গ্রেফতার ব্যক্তি

শুক্রবার রাতে ডানকুনি থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সেই ভুয়ো সহ-সচিব গৌতম সরকারকে গ্রেফতার করল বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ১২:১০
Share: Save:

তিনি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সহ-সচিব। পর্ষদের গোপন নথি রাখা থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব ছিল তাঁর। কিন্তু গোল বাধল তাঁরই পেনশনের নথি খতিয়ে দেখতে গিয়ে। জানা গেল, ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ২৯ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন তিনি। অবশেষে শুক্রবার রাতে ডানকুনি থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সেই ভুয়ো সহ-সচিব গৌতম সরকারকে গ্রেফতার করল বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ।

তিনি নিজের দাদা স্বপন সরকারের পরিচয়ে পর্ষদে কাজ করতেন। শনিবার বিধাননগর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে তিন দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, ১৯৮৮ সালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কেরানি পদে স্বপন সরকারকে নিয়োগ করা হয়েছিল। যিনি সম্পর্কে ধৃত গৌতমবাবুর দাদা। পর্ষদ জানিয়েছে, স্বপনবাবু কাজে যোগ দেননি। ছবি পরিবর্তন করে নিজেকে স্বপন সরকার পরিচয় দিয়ে কাজে যোগ দেন তাঁর ভাই গৌতম। তার পরে বেতন বৃদ্ধি থেকে পদোন্নতি সবই হয়েছে তাঁর। সবাই তাঁকে স্বপনবাবু বলেই চিনতেন। কিন্তু সব ফাঁস হয়ে যায় পেনশনের জন্য নথি খতিয়ে দেখার সময়ে।

পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, চলতি বছরের অক্টোবরে গৌতমবাবুর অবসর নেওয়ার কথা। তাই নথি যাচাই হচ্ছিল। তখনই চাকরির সময়ে স্বপনবাবুর সইয়ের সঙ্গে ভুয়ো স্বপনবাবুর সইয়ের হেরফের ধরা পড়ে। পর্ষদের বেশ কিছু নথিতে দেখা যায়, নাম এক হলেও সই আলাদা। সন্দেহ হওয়ায় সব তথ্য খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পর্ষদের এক আধিকারিককে দেওয়া হয়।

সব দেখার পরে ওই আধিকারিক গোটা বিষয়টি পর্ষদের সচিব নবনীতা চট্টোপাধ্যায়কে জানান। তিনি গোপনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তখন দেখা যায়, স্বপনবাবু এবং গৌতমবাবু দুই ভাই। তাঁদের বাবা পর্ষদের উঁচু পদে কাজ করতেন। পরে কাজ পান বড় ভাই স্বপনবাবু। কিন্তু তিনি কাজে যোগ দেননি। জানা গিয়েছে, তিনি একটি সরকারি পরিবহণ সংস্থার উচ্চ পদে কাজ করে অবসর নিয়েছেন। স্বপনবাবুর জায়গায় ভুয়ো পরিচয় দিয়ে কাজ শুরু করেন গৌতমবাবু। নবনীতাদেবী বলেন, ‘‘আমরা সব তথ্য দিয়ে গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে বিধাননগর পুলিশের কাছে এফআইআর করেছিলাম।’’

থানায় অভিযোগ হওয়ার পরেই বেপাত্তা হয়ে যান গৌতমবাবু। বেশ কিছু দিন ধরে তাঁর খোঁজ চলছিল। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার রাতে হুগলি জেলার ডানকুনির সুভাষপল্লির বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহার অবশ্য দাবি, তাঁর মক্কেলকে
ফাঁসানো হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে দীর্ঘ ২৯ বছর ভুয়ো পরিচয় দিয়ে এক জন পর্ষদের সদর দফতরে কী ভাবে কাজ করে গেলেন? পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘এত দিন এই বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু হয়নি। তাই জানা যায়নি।’’ তা হলে আরও কী এ রকম কোনও ভুয়ো পরিচয় দেওয়া কর্মী থাকতে পারেন? এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE