Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বালককে কুপিয়ে ধৃত যুবক

ধৃতের নাম যতীনকুমার সিংহ। তার ঘর থেকে বঁটি জাতীয় একটি ধারালো অস্ত্রও মিলেছে। তবে, কী কারণে নিকুম্ভ বাল্মীকি নামে ওই বালকের গলায় যতীন ধারালো অস্ত্রের কোপ বসাল, এ দিন রাত পর্যন্ত তা জানাতে পারেনি পুলিশ।

ধৃত যতীন সিংহ

ধৃত যতীন সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৯
Share: Save:

প্রতিবেশীর দশ বছরের ছেলেকে ধারালো অস্ত্রের কোপে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক যুবককে। শনিবার সকালে, বেলেঘাটার রাখাল ঘোষ লেনে।

পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম যতীনকুমার সিংহ। তার ঘর থেকে বঁটি জাতীয় একটি ধারালো অস্ত্রও মিলেছে। তবে, কী কারণে নিকুম্ভ বাল্মীকি নামে ওই বালকের গলায় যতীন ধারালো অস্ত্রের কোপ বসাল, এ দিন রাত পর্যন্ত তা জানাতে পারেনি পুলিশ। তারা জানায়, অভিযুক্তকে জেরা করা হচ্ছে।

এ দিন দুপুরে নিকুম্ভের মা পিঙ্কিদেবী জানান, সানায়া নামে তাঁদের এক বছরের একটি কন্যাও রয়েছে। নিকুম্ভ স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

ওই মহিলা জানান, মাস চারেক আগে যতীন নামে ২২ বছরের ওই যুবক দোতলায় তাঁদের পাশের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। সে একাই থাকত। যতীন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী। মাস দুয়েক আগে যতীনের ঠাকুরমা নয়নাদেবী বিহারের গোপালগঞ্জ থেকে এসে থাকতে শুরু করেন। ওই বৃদ্ধার কাছে মাঝেমধ্যেই যেত নিকুম্ভ ও তার বোন। পিঙ্কিদেবী জানান, নয়নাদেবী ঘরে থাকলে তবেই তাঁর ছেলেমেয়ে যতীনের ফ্ল্যাটে যেত। দীপাবলি উপলক্ষে স্কুল ছুটি থাকায় গত কয়েক দিন সকালে, বিকেলে, এমনকী সন্ধ্যাতেও তাঁর ছেলেমেয়ে ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছে।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ বোনকে সঙ্গে নিয়ে নিকুম্ভ যতীনের ঘরে যায়। আধ ঘণ্টা পরে সানায়াকে যতীন পিঙ্কির কাছে দিয়ে যায়। সেই সময়ে তাঁর স্বামী বাজারে গিয়েছিলেন। পিঙ্কি দেখেন, মেয়ের ফ্রকে রক্তের দাগ। তত ক্ষণে তাঁর স্বামী বাজার থেকে ফিরে এসেছেন। মেয়ের জামায় রক্তের দাগ দেখে পিঙ্কি ও তাঁর স্বামীর সন্দেহ হয়। তাঁরা যতীনের ফ্ল্যাটের দরজায় কড়া নাড়েন। মহিলা জানান, বেশ কিছু ক্ষণ পরে অন্তর্বাস পরা অবস্থায় দরজা খোলে যতীন।

তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন, নিকুম্ভ কোথায়? পিঙ্কির অভিযোগ, যতীন তাঁদের জানায়, সে নীচে খেলতে চলে গিয়েছে। ফ্ল্যাটে জোর করে ঢুকে পড়েন নিকুম্ভের বাবা ও মা। ছেলের ডাকনাম (বাবু) ধরে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন পিঙ্কি। তাঁরা দেখেন, যতীনের ফ্ল্যাটের শৌচাগারে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের ছেলে। গলা ও হাত থেকে ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে। রীতিমতো কাঁপছে সে। পাঁজাকোলা করে ছেলেকে বার করেন আনেন মহিলা। সেই সময়ে যতীন মাথা নিচু করে ঘরে দাঁড়িয়ে ছিল।

তত ক্ষণে নিকুম্ভের বাবার চেঁচামেচিতে লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের কয়েক জন উপরে উঠে সব দেখে বেলেঘাটা থানায় ফোন করেন এবং যতীনকে ঘরে আটকে রাখেন। তার ঠাকুরমা সে সময়ে ফ্ল্যাটে ছিলেন না। পুলিশ বেলা দশটা নাগাদ এসে যতীনের ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। তার আগেই অবশ্য নিকুম্ভকে চিকিৎসার জন্য নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার বাবা।

পিঙ্কি জানান, পুলিশ চলে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসেন নয়নাদেবী। তিনি হতভম্ব হয়ে জানান, এ দিনই ছট পুজো উপলক্ষে যতীনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর দেশের বাড়ি ফেরার কথা। মহিলা জানান, ওই বৃদ্ধা ঘরে নেই জানলে তিনি কিছুতেই তাঁর ছেলেমেয়েকে যতীনের ফ্ল্যাটে যেতে দিতেন না।

এ দিন দুপুরে ওই ফ্ল্যাটবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, যতীনের ঘর তালাবন্ধ। তার ঠাকুরমা তিনতলায় ওঠার সিঁড়িতে মাথা নিচু করে বসে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কী যে হল, কিছুই বুঝতে পারছি না। দেশের বাড়িতে সব জানিয়েছি।’’

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ওই যুবককে আজ, রবিবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হবে। তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আবেদন জানাবে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Youth খুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE