Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ট্রেলার চুরি-চক্রে পুলিশের জালে পাঁচ

কী ভাবে চলত গাড়ি চুরির কারবার? পুলিশ জানায়, কমলজিৎ-সহ পাঁচ জনই চোস্ত ড্রাইভার। চুরি করা ট্রেলারের পিছনে ছুটত তাদের চার চাকার গাড়ি। হাইওয়ে এলাকায় নিজেরা পরিবহণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি তৈরি করেছিল।

মাধ্যম: এই গাড়িতে চেপেই চলত দেদার চুরি। নিজস্ব চিত্র

মাধ্যম: এই গাড়িতে চেপেই চলত দেদার চুরি। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

ছোট চার চাকার গাড়িই ছিল বড় গাড়ি চোরদের সংসার।

মাসখানেক আগে মহেশতলা থানার পুলিশ উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল থেকে গ্রেফতার করে পাঁচ গাড়ি চোরকে। উদ্ধার হয় ১০ চাকার একটি লরিও। ধৃতদের জেরায় উঠে এসেছে ১০ চাকার গাড়ি চুরির চমকপ্রদ নানা কৌশল।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের এক জন কমলজিৎ সিংহ দলের পাণ্ডা। আদতে সে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। কিন্তু থাকত আন্দুলের আলমপুরে। তদন্তকারীরা জানান, এক সময়ে একটি বহুজাতিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থায় মালবাহী ট্রেলার চালাত কমলজিৎ। ট্রেলার চুরি ও বিক্রিতে সে ছিল রীতিমতো সিদ্ধহস্ত। কলকাতা বন্দর এলাকা থেকে মাল সমেত প্রায় ১০-১৫টি ট্রেলার চুরির অভিযোগ রয়েছে কমলজিতের দলের বিরুদ্ধে। পুলিশের কথায়, মাসের পর মাস ছোট সাদা চার চাকার একটি গাড়িতে কখনও বন্দর এলাকা, কখনও হাইওয়ে এলাকায় চক্কর মারত তারা। চালক ও খালাসিবিহীন ট্রেলার পাওয়া গেলেই স্টিয়ারিংয়ে বসে পড়ত কমলজিতের দলের দু’জন।

কী ভাবে চলত গাড়ি চুরির কারবার? পুলিশ জানায়, কমলজিৎ-সহ পাঁচ জনই চোস্ত ড্রাইভার। চুরি করা ট্রেলারের পিছনে ছুটত তাদের চার চাকার গাড়ি। হাইওয়ে এলাকায় নিজেরা পরিবহণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি তৈরি করেছিল। ট্রেলার চুরির পরে সেটি মেরামত করার অছিলায় কোনও পেট্রোল পাম্পে রেখে দিত কমলজিতের লোকজন। ছোটখাটো সারাইয়ের বরাত দেওয়া হতো। মেরামতির কাজ হয়ে গেলে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন পরিবহণ ব্যবসায়ীর কাছে গাড়ির চেসিস নম্বর বদলে তা বিক্রি করে দিত। পুলিশের কথায়, ওই নম্বর অনুযায়ী ঝাড়খণ্ড থেকে তৈরি হতো নকল কাগজপত্র। তার পরে ওই ট্রেলার নতুন রং হয়ে নকল কাগজপত্র সমেত বিক্রি হয়ে যেত।

জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, বছরে প্রায় ২০-৩০টি ট্রেলার চুরি করে বিক্রি করেছে তারা। প্রতিটি বিক্রি করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকায়। তদন্তকারীদের কথায়, এ এক আজব জীবন। চার চাকার গাড়ির ডিকিতে রাখা থাকত পাঁচ জনের জামা-কাপড়। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রথমেই তারা ছকে নিত, কোন ট্রেলার চুরি করা হবে। তার পরে হয় আশপাশের কোনও হোটেলে রাত কাটাত বা হাইওয়ে লাগোয়া কোনও ধাবায় গাড়ি রেখে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকত। সুযোগ বুঝে ‘টার্গেট’ ট্রেলার চুরি করে চম্পট দিত। ট্রেলারে উঠত দু’জন। এক জন চালক ও অন্য জন খালাসি হিসেবে পরিচয় দিত। দলের বাকি তিন জন যেত ছোট গাড়িতে, ট্রেলারের পিছনে।

বছর ছয়েক ধরে রাজ্যের বিভিন্ন হাইওয়ে লাগোয়া প্রায় ৩০টি থানায় ট্রেলার চুরির ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের অনুমান, অধিকাংশ ট্রেলার চুরির পিছনে কমলজিতের দলই জড়িত। তাঁদের আরও সন্দেহ, ট্রেলার চুরি করে ওই পাঁচ জন প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা লুঠ করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Arrest Thieves মহেশতলা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE