Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পথভোলা বৃদ্ধাকে ফেরাল পুলিশ

বৃদ্ধার নাম ইন্দ্রাণী ধানুকা (৭৫)। তাঁর বাড়ি খিদিরপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডে ময়লা ডিপোর কাছে। ছেলে আলিপুর জেলের গ্রুপ ডি কর্মী। রবিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন ইন্দ্রাণীদেবী।

মিলন: পুলিশের সাহায্যে বাড়ি ফেরার পরে নাতির সঙ্গে ইন্দ্রাণী ধানুকা। সোমবার, খিদিরপুরে। নিজস্ব চিত্র

মিলন: পুলিশের সাহায্যে বাড়ি ফেরার পরে নাতির সঙ্গে ইন্দ্রাণী ধানুকা। সোমবার, খিদিরপুরে। নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:২৩
Share: Save:

প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা। হঠাৎ তাঁদের সামনে এসে দাঁড়াল পুলিশের গাড়ি। এক অফিসার গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞেস করলেন, গাড়ির ভিতরে থাকা বৃদ্ধাকে তাঁরা চেনেন কি না। অফিসারকে বাসিন্দারা জানালেন, ওই বৃদ্ধা তাঁদেরই এলাকায় থাকেন, ছেলের পরিবারের সঙ্গে। আগের রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরে ওই পড়শিদের সাহায্যেই বৃদ্ধাকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, বৃদ্ধার নাম ইন্দ্রাণী ধানুকা (৭৫)। তাঁর বাড়ি খিদিরপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডে ময়লা ডিপোর কাছে। ছেলে আলিপুর জেলের গ্রুপ ডি কর্মী। রবিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন ইন্দ্রাণীদেবী। নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের তৎপরতায় মাকে ফিরে পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে ধানুকা পরিবার। বৃদ্ধার নাতি, কলেজপড়ুয়া ভোলা ধানুকা বলেন, ‘‘পুলিশ থাকাতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ ঠাকুরমাকে আমরা ফিরে পেলাম।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ময়দান এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে টহলদারিতে বেরিয়েছিলেন হেস্টিংস থানার পুলিশকর্মী আশরাফুল আলম। তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। কুয়াশামাখা আবছা অন্ধকারের মধ্যে তিনি দেখতে পান, খিদিরপুর রোডের কাছে এক বৃদ্ধা রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। অত ভোরে ময়দানের ওই অংশে একাকী এক বৃদ্ধাকে দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। বাইক ঘুরিয়ে ইন্দ্রাণীদেবীর কাছে যান তিনি। বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে আশরাফুল বুঝতে পারেন, ইন্দ্রাণীদেবীর স্মৃতি কাজ করছে না। তিনি শুধু নিজের নামটাই বলতে পারছেন। এর পরেই ওই পুলিশকর্মী থানায় যোগাযোগ করেন ডিউটি অফিসার রজত চক্রবর্তীর সঙ্গে। বিস্তারিত শুনে অন্য কয়েক জন পুলিশকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে চলে আসেন ওই অফিসার।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই অফিসার এসে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলেন। বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে তিনি নিজের নামের পাশাপাশি ‘ময়লা ডিপো’ বলে একটি জায়গার নাম বলেন। পুলিশকর্মীদের দাবি, বন্দর এলাকা এবং তার আশপাশে একাধিক ‘ময়লা ডিপো’ রয়েছে। ওই অফিসার ঘটনাস্থলের সব চেয়ে কাছে থাকা খিদিরপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডের ময়লা ডিপোয় হাজির হন বৃদ্ধাকে নিয়ে। সেখানেই প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনো লোকজন বৃদ্ধাকে দেখে চিনতে পারেন।

ইন্দ্রাণীদেবীর পরিবার জানিয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি অ্যালঝাইমার্সে ভুগছেন। চিকিৎসাও চলছে। রবিবার রাতে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে যান তিনি। ইন্দ্রাণীদেবীর ছেলে কিষাণ ধানুকা পুলিশকে জানান, রাতে বহু খুঁজেও বৃদ্ধার সন্ধান পাননি তাঁরা।

ভোরের আলো ফোটা মাত্রই বৃদ্ধাকে দেখতে পেয়ে হাঁফ ছাড়ে তাঁর পরিবার। ছেলে-বৌমা থেকে নাতি— সকলেই খুশি পরিবারের বয়স্কতম সদস্যকে ফিরে পেয়ে। থানায় ফেরার জন্য গাড়িতে উঠেই এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘স্যার, আমরাও তা হলে কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE