এমনিতে তাকে ধরা হয়েছে ডিসেম্বরে বেনিয়াপুকুরে গুলিতে এক যুবকের আহত হওয়ার ঘটনায়। কিন্তু ধৃতকে প্রাথমিক জেরা করার পরে দেড় দশক আগে একটি খুনের মামলার কিনারা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বলে পুলিশের দাবি। শহরে কিনারা না হওয়া গুরুত্বপূর্ণ খুনের মামলাগুলির অন্যতম ওই ঘটনা। যেখানে লালবাজারের অদূরে সাতসকালে গুলি চালিয়ে খুন করা হয়েছিল নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়া নামে এক পার্সি বৃদ্ধাকে। ২০০১-এর ২৯ জুনের ঘটনা।
বৃহস্পতিবার কড়েয়া রোড থেকে সরফু নামে বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ। ২৭ ডিসেম্বর দীপক বাল্মীকি ওরফে পাপ্পু নামে এক যুবক গুলিতে জখম হন। ওই মামলার মূল অভিযুক্ত হিসেবে সরফুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিয়ালদহ আদালতের বিচারকের নির্দেশে সে এখন পুলিশি হেফাজতে। শহরে এন্টালি, কড়েয়া, বেনিয়াপুকুর এলাকায় গুলি চলার কয়েকটি ঘটনায় সে জড়িত বলে পুলিশের দাবি। তবে সরফুর সঙ্গে দেড় দশক আগের একটি খুনের মামলার যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে জেনে লালবাজারের গোয়েন্দারা তাকে
জেরা করবেন।
কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘ধৃতকে ভাল করে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। অত পুরনো ঘটনায় সে সত্যিই জড়িত থাকলে দেখতে হবে, এর পিছনে কারা ছিল।’’ আসলে ২০০১-এর ওই খুনের মামলায় এর আগেও পুলিশ এক দুষ্কৃতীর ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল যে সে-ই জড়িত। তবে ম্যালকম চাচা নামে সেই দুষ্কৃতী ধরা পড়ার পরে জানা যায়, তার কোনও ভূমিকাই নেই! তাই সরফুর ব্যাপারে আঁটঘাট বেঁধে নামছে পুলিশ।
একটা সময়ে কলকাতায় তোলাবাজির বেশ কিছু মামলায় সরফুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তোলা না পেয়ে কয়েক জন প্রোমোটার ও ব্যবসায়ীকে গুলিও করে সে। একটি ওয়ান শটার বন্দুক নিয়ে সে ভয় দেখাত। পনেরো বছর আগে ওই পার্সি বৃদ্ধার মাথায় গুলি করা হয়েছিল ওয়ান শটার থেকেই। সেই সময়ে সরফু থাকত এন্টালি এলাকায়।
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, পার্সি বৃদ্ধাকে খুনের পরে কলকাতা ছেড়ে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ায় পালিয়ে যায় সরফু। সেখানে একটি বস্তিতে লুকিয়ে ছিল সে। পরে সেখান থেকে যায় হায়দরাবাদে। কিছু দিন সেখানে কাটিয়ে চলে যায় কেরলে। বছর দশেক আগে কলকাতা ফিরে বন্দর এলাকায় আফজল নাম নিয়ে থাকতে শুরু করে সে। পুলিশ জানাচ্ছে, ওই ভুয়ো পরিচয়েই প্রায় এক দশক ধরে নাদিয়াল, রাজাবাগান, ওয়াটগঞ্জ-সহ বন্দরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘাপটি মেরে ছিল সরফু। এমনকী, আফজল নামে সচিত্র ভোটার কার্ডও বার করে সে। এক ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময়েও সরফু নিজেকে আফজল বলেই পরিচয় দেয়।
সেই সরফু ধরা পড়ল কী ভাবে?
পুলিশ জানায়, ডিসেম্বরে বেনিয়াপুকুরে গুলি চলার ঘটনায় সরফুর সঙ্গী ছিল আকিল। গত সপ্তাহে সে ধরা পড়ার পরেই সরফুর হদিস মেলে। এক গোয়েন্দা অফিসারের বক্তব্য, ২০০১ সালে নিহত পার্সি বৃদ্ধা কোনও ব্যবসায়ী ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাধারণ চাকরিজীবী।
এমন এক জনের থেকে তোলা চাওয়ার কথা নয়। তা হলে কি সরফু সে ক্ষেত্রে সুপারি কিলার হিসেবে কাজ করেছিল? এমন প্রশ্ন উঠছে গোয়েন্দাদের মধ্যেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy