Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দুর্ঘটনার পিছনে গা-ছাড়া পুলিশি ব্যবস্থাই

দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর বিসর্জনের ক্ষেত্রে রেল চলাচল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি হাইট বার লাগানো এবং বিসর্জনের ঘাট সংলগ্ন রেল লাইনে কর্মীও মোতায়েন করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

শহরের অলিগলিতে বড় বড় গণেশ পুজোর ধুম বেড়েছে। পেল্লায় পেল্লায় মূর্তি হয়েছে। কিন্তু সে খবর ছিল না লালবাজারের কাছে। বিসর্জনের ক্ষেত্রে তাই আগাম সতর্কতাও ছিল না। ফলে বিসর্জনের সময়ে পর্যাপ্ত সাবধানতা নিয়ে পুলিশের তরফে রেলের সঙ্গেও কোনও রকম সমন্বয় করা হয়নি। এবং সেই সমন্বয়ের ফাঁক গলেই চলে গেল তিন তিনটে প্রাণ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি পাঁচ জন।

রবিবার রাতে বাবুঘাটে গণেশ বিসর্জন দিতে গিয়ে রেলের ওভারহেডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনার পরে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো, কালীপুজোর বিসর্জনের সময় পুলিশের কথা মেনে আমরা চক্র রেলের লাইনে ওভারহেডের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দি‌ই। কিন্তু গণেশ পুজো নিয়ে কলকাতা পুলিশ আমাদের কিছুই জানায়নি। ফলে ওভারহেডের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু ছিল।’’

রেলকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বলার কথা না-জানানোর বিষয়টি মেনে নিয়েছে লালবাজারও। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘গণেশ পুজোর ক্ষেত্রে এত বড় মূর্তি হয়েছে, তা আমাদের জানা ছিল না। দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর ক্ষেত্রেই এত দিন জানানো হতো।’’ তিনি এ-ও জানান, দুর্গা বা কালীপুজোর ক্ষেত্রে লালবাজারের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। তার ফলেই সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এবং সুষ্ঠু ভাবে হয়। এ বার থেকে গণেশ পুজোর ক্ষেত্রেও সেই পদ্ধতি নেওয়া হবে।

রেল সূত্রের খবর, দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর বিসর্জনের ক্ষেত্রে রেল চলাচল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি হাইট বার লাগানো এবং বিসর্জনের ঘাট সংলগ্ন রেল লাইনে কর্মীও মোতায়েন করা হয়। যাতে রেল সংক্রান্ত কোনও বিপদ ঘটলে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু রবিবার রাতে বাবুঘাটে সে সমস্ত ব্যবস্থাও ছিল না। পুলিশ সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিভিন্ন পুজো কমিটি বিভিন্ন দিক থেকে গঙ্গার ঘাটে ঢুকেছে। তাতে সমস্যা আরও বেড়েছে।

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ একটি গণেশ পুজো কমিটি প্রায় ২৫ ফুট উঁচু একটি মূর্তি নিয়ে বাবুঘাটে হাজির হয়। রেল লাইন পেরোতে গিয়ে তাঁদের ট্রলির চাকা আটকে গিয়েছিল। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তাঁদের আটকে যাওয়া চাকাটি ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। তখনই কয়েক জন জলে ভেজা একটি কাঁচা বাঁশ দিয়ে আচমকা ওভারহেড তারে ঠেলা মারেন। বাঁশটি হাই ভোল্টেজ তার ছুঁতেই প্রচণ্ড শব্দ হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন আট জন।

কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গণেশ পুজোর রমরমা দেখে আগেভাগে সতর্ক হলে ওই পুজো কমিটির সদস্যেরা রেল লাইনের ধারে-কাছে যেতেই পারতেন না। তাতে বিপদ এড়ানো যেত। কিন্তু শহরে গণেশ পুজোর এত রমরমা দেখেও লালবাজার কোনও সতর্কতা নিল না কেন?

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এই সব পুজোর জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে অনুমতিপত্র নিতে হয় না। স্থানীয় থানাগুলি থেকেই অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি, গণেশ পুজোর এই রমরমার পিছনে বহু ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতারা জড়িত থাকেন। ফলে এগুলি নিয়ে কিছুটা গা-ছাড়া মনোভাব ছিল থানার ওসিদেরও। বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় মূর্তি বিসর্জন দিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে সতর্কতা প্রয়োজন, তা-ও সদর দফতরের কর্তাদের জানানো হয়নি স্থানীয় থানার তরফে।

এই পরিস্থিতিতে পুলিশেরই এক প্রবীণ অফিসারের মন্তব্য, ‘‘তিনটে প্রাণের বিনিময়ে এ বার সত্যিই টনক নড়ে কি না, সেটাই দেখার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE