প্রতীকী ছবি।
প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল বধূর।
এই ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ওই বধূর উপরে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মৃতার পরিবারের তরফে। এই নিয়ে একই সপ্তাহে পরপর তিনটি পারিবারিক অত্যাচারের কারণে বধূ-মৃত্যুর অভিযোগ উঠল শহরে।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মানিকতলা থানা এলাকার মুরারিপুকুরের বাসিন্দা তন্ময় বিশ্বাসের স্ত্রী নন্দিতা বিশ্বাসকে (২৩) ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে নন্দিতার দেহ। রবিবার তন্ময়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিন নন্দিতার কাকা রমেন সরকার জানান, গত বছর ১৯ অগস্ট শান্তিপুরের মেয়ে নন্দিতার বিয়ে হয় বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত তন্ময়ের সঙ্গে। বাড়ির অমত সত্ত্বেও নন্দিতাই তন্ময়কে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
রমেনবাবুর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই নানা বিষয় নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে থাকে। মাসখানেক ধরে ওয়াশিং মেশিন কিনে দেওয়ার জন্য নন্দিতার উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এর জন্য ননদ ও শাশুড়ি নন্দিতার উপরে অত্যাচার করতেন বলে অভিযোগ। শ্বশুরবাড়িতে নিয়মিত মারধর ও খেতে না দেওয়ার অভিযোগও করেছে নন্দিতার পরিবার। রমেনবাবু জানান, দিন দুয়েক আগে মারধরের ছবি তুলে নন্দিতা হোয়াট্সঅ্যাপে তাঁর খুড়তুতো বোনকে পাঠান। মুখে রক্ত জমা ছবির নীচে তিনি লিখেছিলেন, রোজ তাঁকে অত্যাচার সহ্য করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। নন্দিতার পরিবারের দাবি, ছবি দেখার পরে তাঁরা তন্ময়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শীঘ্রই এই বিষয়ে তন্ময়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চান তাঁরা। ইতিমধ্যেই শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ তন্ময়ের পরিবারের তরফে রমেনবাবুকে ফোন করে জানানো হয়, একটি ঘরে অনেকক্ষণ ধরে নন্দিতা দরজা বন্ধ করে রয়েছেন। ডাকলেও সাড়া দিচ্ছেন না। কিছুক্ষণ পরে তন্ময় ফোন করে জানান, নন্দিতা আত্মহত্যা করেছেন। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, নিত্য দিনের অত্যাচারের জেরে এই পরিণতি তাঁদের মেয়ের। রমেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘শুধু জামাইকে গ্রেফতার করলে চলবে না। নন্দিতার শাশুড়ি আর ননদকেও শাস্তি দিতে হবে। ওঁরাই মেয়েটাকে শেষ করে দিলেন। এত লোভ! রোজ নতুন জিনিসের জন্য মারধর করতেন।’’
নন্দিতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর বাবা কানু সরকার ও কাকা রমেন সরকার মালয়েশিয়ায় বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। কানুবাবু মালয়েশিয়াতেই আছেন। নন্দিতার মা রিতাদেবী জানান, বিয়ের আগে তন্ময়ের পরিবারকে তাঁদের অপছন্দ ছিল। এমনকী, বিয়ের সময়ে নন্দিতার বাবা এবং কাকা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। অভিযোগ, বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ির সদস্যেরা বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আসার জন্য নন্দিতার উপরে মানসিক অত্যাচার চালান। জিনিস না পেলে শুরু হয় শারীরিক অত্যাচারও। কয়েক বার তন্ময়ের সঙ্গে বচসা হওয়ায় নন্দিতা শান্তিপুরে চলে যান। কিন্তু নিজেই আবার শ্বশুরবা়ড়িতে ফিরে আসেন।
পুলিশ জানায়, রবিবার বিকেলে ময়না-তদন্তের পরে নন্দিতার দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে পরিবারের হাতে। মেয়ের দেহ জড়িয়ে ধরে মা বলেন, ‘‘এমন হবে বুঝতে পারলে বিয়েটা হতে দিতাম না।’’ এ দিন মানিকতলার বাড়িতে গিয়ে নন্দিতার শ্বশুরবাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy