শুশ্রূষা: হাসপাতালে বৃদ্ধের পরিচর্যা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
পুলিশের মানবিক মুখ দেখল লিলুয়া।
রাস্তার ধারে এক বৃদ্ধ পড়ে রয়েছেন, সবাই দেখেও মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। পরিচিত এক জনের মুখে খবরটা শুনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন জি টি রোডে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পরেও বৃদ্ধের সন্ধান না মেলায় তাঁরা ফের লিলুয়া স্টেশন রোডে নিজেদের কাজের জায়গায় ফিরে আসেন। এর পরে ফের খবর আসে, আরও কিছুটা দূরে নর্দমায় পড়ে রয়েছেন ওই বৃদ্ধ।
তড়িঘড়ি লিলুয়া বজরংবলী মোড়ের ওই জায়গায় পৌঁছে যান বালি ট্র্যাফিক গার্ডের তিন কর্মী। দেখেন, নর্দমায় পড়ে আছেন সারা গায়ে পাঁক-কাদা মাখা শীর্ণকায় এক বৃদ্ধ। কালবিলম্ব না করে তাঁকে তুলে স্থানীয় একটি মন্দির চত্বরে নিয়ে যান বালি ট্র্যাফিক গার্ডের এসআই সুশান্ত রায়, এএসআই গঙ্গাধর ভট্টাচার্য ও কনস্টেবল সমীর খাঁড়া। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার।
উদ্ধারকারীদের কথায়, ‘‘দেখে মনে হচ্ছিল ওই বৃদ্ধ দীর্ঘ দিন কিছু খাননি। শরীরে শক্তি নেই। তাই হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। কিন্তু সারা শরীর কাদা মাখা। ওই অবস্থায় হাসপাতালে নেবে কি না, বুঝতে পারছিলাম না।’’ ওই পুলিশকর্মীদের থেকে পুরো বিষয়টি জানতে পারেন বালি ট্র্যাফিকের আইসি কল্যাণ চক্রবর্তী। তিনি নির্দেশ দেন, বৃদ্ধের যথাযথ ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত যেন ওই পুলিশকর্মীরা সঙ্গেই থাকেন।
সারা মুখে দাড়ি, পরনে কাদা-মাখা গেঞ্জি, গামছা, সারা শরীরেও কাদা-ময়লা ভর্তি। মন্দির চত্বরে বসানোর পরে হাতে গ্লাস নিয়ে জলও খাওয়ার ক্ষমতা ছিল না তাঁর। শেষে পুলিশকর্মীরাই জল খাইয়ে দেন। কিন্তু নোংরা অবস্থায় বৃদ্ধকে হাসপাতাল ভর্তি নেবে না ভেবেই তাঁকে সাবান মাখিয়ে স্নান করানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
আরও পড়ুন...
দিল্লিতে ‘ভর্ৎসিত’ পুরসভা
এর পরেই এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে দিয়ে বেলুড় বাজার থেকে নতুন জামা ও গামছা কিনে আনান গঙ্গাধরবাবুরা। অন্য দিকে, স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই বৃদ্ধকে স্নান করিয়ে পরিষ্কার করান। পুলিশকর্মীরাই তাঁকে জায়সবাল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এলাকাবাসীর কথায়, ‘‘স্যারেরা ওই বৃদ্ধকে নর্দমা থেকে না তুললে উনি ওখানেই হয়তো পড়ে থাকতেন। ওঁকে তো লোকে নেশাখোর, পাগল ভেবে কেউই পাত্তা দিচ্ছিল না।’’কিছুটা চনমনে হওয়ার পরে চিকিৎসকদের ক্ষীণ গলায় বৃদ্ধ জানান তাঁর নাম, ‘কিশোর যাদব...’।
হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা ভাল কাজ করেছেন। কোনও মানুষকে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলে তাঁকে সহযোগিতা করা পুলিশের কর্তব্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy