ধৃত ডি জে নিখিল লাখওয়ানি, রবার্ট ডিক্সন ও হেনরি লরেন্স মান্না।
হিমাচলপ্রদেশ থেকে কলকাতায় চরস পাচারের অভিযোগে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র হাতে ধরা পড়লেন শহরের তিন বাসিন্দা।
এনসিবি-র অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে হেনরি লরেন্স মান্না ওরফে পেড্রো হিমাচলপ্রদেশ থেকে ট্রেনের কামরায় লুকিয়ে চরস নিয়ে আসতেন কলকাতায়। তুলে দিতেন বালিগঞ্জের বাসিন্দা রবার্ট ডিক্সনের হাতে।
ডিক্সনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল পার্ক স্ট্রিটের এক নাইট ক্লাবের ডি জে নিখিল লাখওয়ানির। নিখিলের যোগাযোগের ভিত্তিতে হিমাচলের সেই চরস ছড়িয়ে পড়ত শহরে। বিভিন্ন পার্টিতে ব্যবহার হত।
ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে সেই চরস কিনে নিয়ে যেতেন।
এনসিবি সূত্রের খবর, নিখিল ও ডিক্সন— দু’জনে আবার নিজেরাও মাদক সেবন করেন। ডিক্সন শুধু চরস। নিখিল চরস-সহ অন্য মাদকও নেন। রবিবার এই তিন জনের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া দু’কেজি ৪৫০ গ্রাম চরসের বাজারদর প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বলে এনসিবি সূত্রে জানা গিয়েছে।
এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব সোমবার জানিয়েছেন, এ বার হিমাচল থেকে চরস আনার খবর আগে থেকে পেয়ে যান তাঁরা। রবিবার এনসিবি-র অতিরিক্ত অধিকর্তা সুধাংশু সিংহের নেতৃত্বে একটি দল অপেক্ষা করছিলেন শিয়ালদহ স্টেশনে। দিল্লি থেকে ট্রেনে করে লরেন্স শিয়ালদহে নামার পরে দূর থেকে চিনিয়ে দেন ‘সোর্স’। কিছুটা সময় লরেন্সের পিছু নেন অফিসারেরা। স্টেশনের বাইরে আসতেই তাঁকে ধরা হয়। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায় দুই কিলোগ্রাম চরস।
উদ্ধার হওয়া চরসের প্যাকেট।
সেখানেই জেরার মুখে লরেন্স জানান, তাঁর কাজ ছিল শুধু হিমাচল থেকে কলকাতায় চরস এনে দেওয়া। শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে ডিক্সনের অপেক্ষা করার কথা। তাঁর হাতেই চরস তুলে দেওয়ার কথা লরেন্সের। অফিসারেরা লরেন্সকে ছেড়ে দিয়ে নির্দেশ দেন, পরিকল্পনা মাফিক ডিক্সনের সঙ্গে দেখা করতে। দূর থেকে তাঁর উপরে নজর রাখতে থাকেন অফিসারেরা। ডিক্সনও কথা মতো অপেক্ষা করছিলেন। লরেন্স চরস ভর্তি ব্যাগ ডিক্সনের হাতে তুলে দিতেই দু’জনকে একসঙ্গে ধরে ফেলেন এনসিবি অফিসারেরা।
৫৮ বছরের লরেন্সের বাড়ি বেনিয়াপুকুরে। বছর ৪৫-এর ডিক্সন থাকেন বালিগঞ্জে। রবিবারেই দু’জনের বাড়িতে হানা দেন অফিসারেরা। ডিক্সনের বাড়ি থেকে পাওয়া যায় আরও ৪৫০ গ্রাম চরস। জেরার মুখে ডিক্সন জানান, এই চরস হিমাচলের কুলু থেকে আনা হচ্ছিল। এই প্রথম নয়, গত ছ’ মাস ধরে এ ভাবে হিমাচল থেকে লরেন্স চরস এনে তা তুলে দিচ্ছিলেন ডিক্সনের হাতে। লরেন্স যে মাসে গড়ে ২-৩ বার ট্রেনে করে দিল্লি যাতায়াত করছিলেন, তার তথ্যপ্রমান পাওয়া গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন দিলীপবাবু।
দিলীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘সামনেই বড়দিন। তার পরে নতুন বছর। এই সময়ে কলকাতায় পার্টির সংখ্যা এমন বাড়ে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাদকের চাহিদাও বাড়ে। সাধারণত যেখানে ১০ গ্রাম চরসের বাজারদর ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে, এই সময়ে তা বেড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকাও হয়ে যায়। মুনাফা এতটাই বেড়ে যায় এই সময়টায়।’’
এনসিবি সূত্রের খবর, ডিক্সনকে জেরা করতে করতেই উঠে আসে নিখিলের নাম। ২৯ বছরের এই যুবক পার্ক স্ট্রিটের একটি নামকরা নাইট ক্লাবের ডিজে। জানা যায়, নিখিল সমাজের উচ্চস্তরে মেলামেশা করেন। তাঁর সঙ্গে অনেক সেলিব্রিটিদের আলাপ-পরিচয়। অভিযোগ, যাঁদের চরসের প্রয়োজন হয়, তাঁরা যোগাযোগ করেন নিখিলের সঙ্গে। নিখিল তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন ডিক্সনের। রবিবার পার্ক স্ট্রিটের কারনানি ম্যানসন থেকে গ্রেফতার হওয়া নিখিলের কাছ থেকে একটি এলএসডি ব্লটিং পেপারও পাওয়া গিয়েছে। তবে সেটি নিখিল নিজের নেশার জন্য ব্যবহার করতেন বলে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা মনে করছেন। মাদক বিক্রির অপরাধ প্রমানিত হলে ধৃত তিন জনেরই দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বলে এ দিন দিলীপবাবু জানিয়েছেন।
দিলীপবাবুর কথায়, লরেন্স-ডিক্সন-নিখিল এই তিন জনের দলের মতো শহরে আরও অনেক মাদকচক্র রয়েছে। এ রকম আরও কিছু দলের হদিস ধৃত তিন জনের কাছ থেকেও পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন অফিসারেরা। কারা নিয়মিত ডিক্সনের কাছ থেকে চরস কিনে নিয়ে যেতেন, তার একটি তালিকা নিখিলের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে চরস ক্রেতাদের নাম ফাঁস করা যাবে না বলে জানিয়েছেন দিলীপবাবু। তবে তিনি জানান, ওই তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের অধিকাংশই সমাজের উচ্চস্তরের মানুষ। চিকিৎসক থেকে বিভিন্ন জগতের তারকা, অনেকেই রয়েছেন সেই তালিকায়।
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy