প্রতীকী ছবি।
দিন কয়েক আগে এক মহিলার হাত ধরে এক তরুণী বেরিয়ে যাচ্ছিলেন কলকাতা বিমানবন্দরের ‘গ্রিন চ্যানেল’ দিয়ে। দু’জনের গায়েই প্রচুর গয়না। দেখে সন্দেহ হয় শুল্ক অফিসারদের। পথ আটকে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।
বিদেশ থেকে আসার পরে যাঁদের কাছে শুল্ক কর দেওয়ার মতো কোনও জিনিস ‘ডিক্লেয়ার’ করার থাকে না, তাঁরাই সরাসরি বিমানবন্দরের শুল্ক দফতরের এই গ্রিন চ্যানেল বা রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যান। শুল্ক অফিসারদের সজাগ চোখ থাকে। সামান্য সন্দেহ হলেই ডেকে নেন যাত্রীকে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়ানমার থেকে আসা ওই তরুণীর বয়স বড়জোর বছর ২০। ওই বর্মী মুসলমান তরুণীর বেশভূষা সাধারণ, হাতে বেশ কয়েক গাছা রুপোলি চুড়ি। তাঁর সঙ্গী বছর তিরিশের মহিলাও বর্মী। গলায় বেশ কয়েকটি রুপোলি হার।
সঙ্গে এত গয়না কেন? প্রশ্ন করা হলে, শুল্ক অফিসারদের তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, যে হাল ফ্যাশনের রুপোর গয়নাই তাঁরা দু’জনে বেশি পছন্দ করেন। পরে একটানা জেরার মুখে ভেঙে পড়েন তাঁরা। জানা যায়, রুপো নয়, গয়নাগুলি আসলে সোনার। ধোঁকা দেওয়ার জন্য তার উপরে রুপোলি রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।
জেরার পরে সেই গয়না জমা পড়ে যায় শুল্ক দফতরে।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বছর কুড়ির ওই তরুণী শুল্ক দফতরের অফিসারদের জানিয়েছেন, তাঁদের ইয়াঙ্গনের অসহায় দিনযাপনের কাহিনি।
তাঁদের দাবি, সেখানকার বৌদ্ধদের একাংশ তাঁদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের উৎখাত করে বার করে দেওয়া হয়েছে সে দেশ থেকে। শান্তিতে নেই তাঁদের মতো জন্মসূত্রে বর্মী মুসলিমরাও। জানিয়েছেন, ভয়ে ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে পারেন না। প্রতিনিয়ত রক্তচক্ষুর সামনে দিনযাপন করতে হয়।
তরুণী জানিয়েছেন, ইয়াঙ্গনে তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। সেই ব্যবসা দেখভাল করেন তাঁর মা, দাদা ও তিনি। তাঁর বাবাও জন্মসূত্রে বর্মী এবং সেখানকারই নাগরিক। বছর পাঁচেক আগে সেখান থেকে এসে এখন তিনি কলকাতাতেই থাকেন। তরুণী আসছিলেন বাবার কাছে। তরুণীর যুক্তি ছিল, সে দেশে কোনও সুরক্ষা নেই। বাড়িতে সোনা রাখলে লুঠ হয়ে যেতে পারে। তাই গয়নাগুলি সুরক্ষিত রাখার জন্যই পরে এসেছেন তাঁরা।
সোমবার কলকাতায় ওই তরুণীর বাবা আব্দুলের (নাম পরিবর্তিত) খোঁজ মিলেছে। তাঁর কথায়, ‘‘ইয়াঙ্গনের পরিস্থিতি ভাল নয়।
তাই ঠিক করেছিলাম মেয়ের বিয়ে এখানে দিয়ে দেব। এখানে বিয়ে দিতে গেলে টাকার দরকার। তাই, ওই ভাবে গয়না নিয়ে আসা হচ্ছিল। আমরা আইন জানতাম না, এটা আমাদের অজ্ঞতা।’’
আব্দুল বছর পাঁচেক ধরে কলকাতায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। মাঝেমাঝে ইয়াঙ্গন যাতায়াত করেন। আগে কলকাতা থেকে সপ্তাহে দু’দিন মায়ানমারে উড়ান চালাচ্ছিল শুধু এয়ার ইন্ডিয়া। এখন গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই রুটে সপ্তাহে দু’দিন উ়ড়ান চালাতে শুরু করেছে মায়ানমার এয়ারলাইন্সও। সুবিধা হয়েছে আব্দুলের। এখান থেকে ব্যবসার মালপত্র কিনে পাঠান ইয়াঙ্গনে। বলেন, ‘‘কষ্ট করে ব্যবসা করতে হচ্ছে। ‘মুসলিমদের দোকান থেকে মালপত্র কিনো না’ বলে নিয়মিত প্রচার হচ্ছে সেখানে।’’
কত দিন এভাবে স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে থাকবেন?
আব্দুলের কথায়, ‘‘দিন বদলাবে। সেই আশাতেই বেঁচে আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy