প্রতীকী চিত্র।
ফেসবুকে পরিচয়ের বছর দুয়েক পরে সম্পর্ক গড়ায় পরিণয়ে। পাত্রী মুম্বইয়ের, পাত্র সোদপুরের। তরুণীর পরিবারের মত ছিল না এই বিয়েতে। মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে, পাত্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পাত্রীর বাবা। ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’ আইনে মামলা করে দু’-দু’বার সোদপুরে হানা দেয় মুম্বইয়ের মাটুঙ্গা পুলিশ। মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করেন দর্শিনী হুডা নামে ওই তরুণী। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বিস্ময়, ‘‘একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কোনও রাজ্যের পুলিশ জাদুবিদ্যা আইনকে হাতিয়ার করে কোনও দাম্পত্য জীবনের ব্যাঘাত ঘটায় কী করে?’’
আইন বলছে: প্রতারণা করে, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যদি এমন কোনও কাজের কথা বলা হয়, যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলে তা ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক অ্যাক্ট’-এর আওতায় পড়ে। যেমন, তিন দিনে তিন ইঞ্চি উচ্চতা বাড়ানোর ওষুধের বিজ্ঞাপন বা দু’মিনিটে বশীকরণের দাবি— এ সবই ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক অ্যাক্টে’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এই আইনকে অস্ত্র করেই দর্শিনীর বাবা লিটেশ হুডা স্থানীয় মাটুঙ্গা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন যে, তাঁর মেয়ের স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগ রয়েছে। তার সুযোগ নিয়ে, ‘কালাজাদু’ করে, অতিপ্রাকৃত উপায়ে বশ করে, ‘ফুসলে’ দর্শিনীকে বিয়ে করেছেন সোদপুরের শঙ্কর ভট্টাচার্য। অভিযোগ পেয়েই সক্রিয় হয়ে ওঠে ওই থানার পুলিশ। তরুণীকে ‘উদ্ধার’ করতে দু’বার চলে আসে সোদপুরে। কিন্তু এলাকাবাসীর বাধায় তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
এ দিন আদালতে দর্শিনীর আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী জানান, তাঁর মক্কেল মহারাষ্ট্রের মাটুঙ্গা এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজার ছিলেন। শঙ্করকে বিয়ে করার জন্য গত ৪ অক্টোবর মুম্বই থেকে সোদপুরে চলে আসেন। ৫ অক্টোবর তাঁদের বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়। কলকাতায় বদলি চেয়ে বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষের কাছে দর্শিনী আবেদনও করেছেন। এর পরেই থানায় অভিযোগ করেন দর্শিনীর বাবা।
আশিসবাবু এ-ও জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে মহারাষ্ট্র পুলিশ দর্শিনীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য সোদপুরে হানা দেয়। পুলিশের এই অতিসক্রিয়তা দেখে দর্শিনী মাটুঙ্গা থানার ওসিকে তাঁদের বিয়ের সরকারি নথি, নিজের ভোটার কার্ড ও তাঁর অফিসের পরিচয়পত্র পাঠিয়ে জানান, তিনি সাবালিকা। নিজের ইচ্ছায় শঙ্করবাবুকে বিয়ে করেছেন। পুলিশ যেন তদন্ত বন্ধ করে দেয়। তাতেও কাজ না-হওয়ায় ওই তরুণী মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনারকেও বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি দেন। চিঠি দেওয়া হয় ব্যারাকপুর ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়েও। তার পরেও মুম্বই পুলিশ তদন্ত বন্ধ না-করে দর্শিনীকে বারবার বাড়ি ফিরে আসার জন্য চাপ দিতে থাকে বলে অভিযোগ।
এর পরেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। গত সপ্তাহে এই মামলার শুনানিতে দর্শিনীর বাবার আইনজীবী পার্থসারথি ভট্টাচার্য আদালতে একটি নথি পেশ করে জানিয়েছিলেন, দর্শিনীর স্কিৎজোফ্রেনিয়া হয়েছে। তাই চিকিৎসার কারণেই তাঁকে তাঁর বাবা মুম্বই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। দর্শিনী আদালতে স্পষ্ট জানান, তাঁর এ ধরনের কোনও রোগই নেই।
দর্শিনীর দাবি, তিনি ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজার। যথেষ্ট চাপের মুখে কাজ করতে পারেন তিনি। তাঁর রোগের সপক্ষে যে চিকিৎসকের নথি দেখানো হচ্ছে, তাঁকে তিনি চেনেনই না। বিচারপতি বসাক ওই দিনই দর্শিনীর বাবার পরামর্শ দেন, মেয়ে-জামাইকে কোনও রেস্তোরাঁয় নিয়ে গিয়ে একসঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। তাতে দর্শিনীর বাবা রাজি হননি।
এ দিন মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। দর্শিনী ও তাঁর বাবাকে তাঁদের বক্তব্য হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেছেন বিচারপতি। শীতের ছুটির পরে হাইকোর্ট খুললে মামলাটি ফের উঠবে। তবে এ দিন বিচারপতি নির্দেশ দেন, মহারাষ্ট্র বা অন্য কোনও রাজ্যের পুলিশ বা প্রশাসন দর্শিনী ও তাঁর স্বামী শঙ্কর ভট্টাচার্যের দাম্পত্য জীবনে বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না।
ব্ল্যাক ম্যাজিক অ্যাক্ট কী
যে কোনও রকম অবৈজ্ঞানিক কাজের দাবি-ই এই আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় পড়ে। বিশেষত,
• ভূত তাড়ানোর নাম করে কাউকে মারধর
• অলীক কোনও কিছু ঘটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
• অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নির্যাতন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy