Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

থানার ভিতরে পুলিশকে পিটুনি, সঙ্গে ভাঙচুরও

এ বার হাওড়ায় আক্রান্ত পুলিশ। দিন কয়েক আগে এই হাওড়ায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী সালকিয়ায় শিশু-নিখোঁজ ও খুনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তার পরেও সোমবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে রক্তাক্ত হয় হাওড়ার রামরাজাতলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁতরাগাছি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

এ বার হাওড়ায় আক্রান্ত পুলিশ।

দিন কয়েক আগে এই হাওড়ায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী সালকিয়ায় শিশু-নিখোঁজ ও খুনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তার পরেও সোমবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে রক্তাক্ত হয় হাওড়ার রামরাজাতলা। চব্বিশ ঘণ্টা কাটার আগেই ফের সোমবার গভীর রাতে হাওড়ার সাঁতরাগাছি থানায় হামলা চালাল শ’দুয়েক মানুষ। চেয়ার-টেবিল উল্টে নষ্ট করে দেওয়া হল গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। মারধর করা হল কর্তব্যরত অফিসার-সহ আরও দুই পুলিশকর্মীকে। ভাঙচুর করা হল একটি গাড়িও।

ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাঁতরাগাছির এই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলেও তৃণমূলের দাবি, এটা স্থানীয় দুষ্কৃতীদেরই কাজ। ধৃতদের মঙ্গলবার হাওড়া আদালতে তোলা হয়। তাদের ৯ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত এক পারিবারিক বিবাদ ঘিরে। সাঁতরাগাছি থানার স্বদেশপল্লির বাসিন্দা শম্পার সঙ্গে বছরখানেক আগে বিয়ে হয় রেলইয়ার্ড ঘেঁষা সাহেবপাড়ার বিজয় ডোঙা-র। মাসখানেক আগে তাঁদের একটি ছেলে হয়। সন্তানসম্ভবা শম্পাকে বাপের বাড়ি পাঠানো হয়েছিল। সন্তান হওয়ার পরে মাসখানেক কেটে গেলেও তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে ফেরাতে আগ্রহ দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ। জামাইষষ্ঠীর আগের দিন শনিবার দুপুরে মা এবং দাদাকে নিয়ে বিজয়বাবুদের বাড়ি যান শম্পা। অভিযোগ, তাঁদের অপমান করে তাড়িয়ে দেন বিজয় ও তাঁর মা শোভাদেবী। রবিবার সাঁতরাগাছি থানায় অভিযোগ জানান শম্পাদেবী।

চার পুলিশকর্মী শম্পাদেবীকে নিয়ে ফের বিজয়বাবুদের বাড়িতে যান। পুলিশের সঙ্গে বচসার মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শোভাদেবী। পুলিশই তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে এবং শম্পাদেবীকে তাঁর বাপের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। শম্পাদেবীর অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরেই পণের জন্য তাঁর উপরে অত্যাচার চলছে।

পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে এলাকার কয়েক জন যুবক, যাঁরা এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত, বিজয়ের হয়ে থানায় যান আপসের জন্য। ঠিক হয়, বিজয় শম্পাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। পুলিশ জানায়, এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ওই তৃণমূলকর্মীদেরই নেতৃত্বে শ’দুই লোক শম্পাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর চালায়। শম্পাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করলে আক্রমণকারীদের বাধা দেন তাঁর দাদার স্ত্রী। তখন তাঁরও শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি শেষে শম্পার এক মাসের বাচ্চাকে নিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। রাত একটায় উত্তেজিত আক্রমণকারীরা থানায় চড়াও হয়।

অভিযোগ, থানায় ঢুকেই তারা চেয়ার-টেবিল উল্টে দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। নষ্ট করে দেওয়া হয় দরকারি নথি। থানায় তখন পুলিশ কম ছিল। ডিউটি অফিসার আক্রমণকারীদের আটকাতে গেলে তাঁকে চড়, ঘুসি মেরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। আক্রমণকারীরা থানা চত্বরে রাখা পুলিশের একটি গাড়িও ভাঙচুর করে। অবস্থা সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ আসে। পুলিশ জানায়, আক্রমণকারীরা তখন র‌্যাফ ও পুলিশকে লক্ষ করে ইটবৃষ্টি শুরু করে। পুলিশকেও দফায় দফায় লাঠি চালাতে হয়। রাতেই থানা ভাঙচুর ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগে শম্পাদেবীর স্বামী-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

হাওড়া সিটি পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, ‘‘থানায় ঢুকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ডিউটি অফিসারকে চড়-ঘুষি মারে, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট করে, চেয়ার-টেবিল উল্টে দেয়। পুলিশকে লক্ষ করে ইটও ছোড়া হয়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলা চালানোর অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে ওই মহিলার স্বামী বিজয় ডোঙাও রয়েছেন। মূল অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তাদের পাশাপাশি থানায় পৌঁছেছেন এলাকার তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের দক্ষিণ হাওড়ার সাধারণ সম্পাদক বাপি মজুমদার বলেন, ‘‘পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, মারধর করার পাশাপাশি থানায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। কিন্তু পুলিশ কিছু নিরাপরাধ লোকজনকেও ধরেছে।’’ হাওড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ রায় বলেন, ‘‘এই ঘটনায় এলাকার কিছু দুষ্কৃতী জড়িত। তাঁরা দলীয় কর্মী নন। পুলিশকে বলেছি কড়া ব্যবস্থা নিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE