পুজো মানেই মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানো, পাশাপাশি নানা সাজের প্রতিমা ও আলোকসজ্জা দেখা। আর থিমের লড়াই শুরুর পর থেকে তো পুজো শিল্পের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। কোথাও কোথাও আবার শুধু শিল্প নয়। উদ্যোক্তারা নিজেদের পুজোর মাধ্যমে তুলে ধরেন নানান বার্তা। কেউ সমাজের নানা ঘটনা, কেউ মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তোলেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মারণ দিক। এ বছরের পুজোও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই শহর ঘুরে সেই সব কাজ চাক্ষুষ করতে হলে যেতে হবে দক্ষিণ থেকে উত্তর কিংবা মধ্য কলকাতাতে।
যেমন যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশন। তাদের এ বারের থিম ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি।’ ৬৫ বছর পেরিয়ে ওঁদের শিল্পী পদ্মফুলের আকারে তৈরি করছেন মণ্ডপ। মণ্ডপের চারপাশে থাকবে চায়ের পেটি দিয়ে তৈরি অসংখ্য ছোট ছোট নৌকা। মা দুর্গা এখানে কালীদাসের ‘কুমারসম্ভবের’ অপর্ণা চরিত্রের আদলে। শান্তির আবহ তৈরি করতে উপরি পাওনা ‘থিম সং’ আর মানানসই আলোর ব্যবহার।
গোয়াবাগান সর্বজনীন এ বার সবুজ পৃথিবী গড়ার ডাক দিয়েছে। অসুর সেখানে ‘দূষণ রাক্ষস।’ দুর্গা ‘শ্যামলিমাময়ী মা।’ বার্তা সবুজ রক্ষা।
অজয়নগর অগ্নিবীণা সঙ্ঘ এই প্রথম পুজোর আয়োজন করেছে। প্রথম বছরেই তারা বেছে নিয়েছে পরিবেশ দূষণের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে পৃথিবী আজ বিবর্ণ। কোথাও অতিবৃষ্টি, কোথাও আবার খরার ভ্রূকুটি। অগ্নিবীণা সঙ্ঘ তাই পরিবেশ বাঁচাতে মণ্ডপ সাজাচ্ছে পরিবেশবান্ধব নানা উপকরণ দিয়ে। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমার হাতে থাকছে ত্রিশূলের বদলে গাছের ডাল।
সাহাপুর সর্বজনীন দুর্গোত্সব সমিতি (পশ্চিম) ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়কে তুলে ধরছে মণ্ডপসজ্জায়। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ওই বিপর্যয়ের ঘটনা থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকার্য সবই মণ্ডপে থাকবে। থাকছে হেলিকপ্টার, রোপওয়ে, স্পিড বোটের মডেলও।
মধ্য কলকাতার ২০ পল্লি সর্বজনীনের পুজো পা দিল ৬৭ বছরে। ফুল ছাড়া মায়ের পুজো অসম্পূর্ণ। তাই লক্ষাধিক কাচ দিয়ে, নানা রঙের ফুলে সাজছে মূল মণ্ডপ। মণ্ডপসজ্জায় থাকছে শোলার বাটি ও গ্লাস। অন্য দিকে, দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিট পল্লি সমিতির পুজোয় মণ্ডপ এবং প্রতিমার থিম “সব রং এসে মেশে, তোমার এ শুভ্র বেশে”। সাত রং মিশে তৈরি হয় সাদা। আবার, সাত রং মিশে তৈরি হয় রামধনু। মণ্ডপের প্রবেশপথে থাকছে ৪০ ফুটের একটি চাকা। সাত রঙের মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে চাকাটি। শিল্পী দেবতোষ করের ভাবনায় প্রতিমার সজ্জাতেও থাকছে সাদা রঙের ব্যবহার। তাঁর দশ হাতে অস্ত্রের বদলে থাকবে শ্বেতপদ্ম।
মল পল্লি সর্বজনীন পূজা কমিটির ভাবনায় এ বার প্রাধান্য পেয়েছে নারী অগ্রগতির কাহিনি। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, মা দুর্গা অম্বিকা রূপে এসে অসুর বধ করেছিলেন। সারদাদেবীর মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ খুঁজে পেয়েছিলেন শক্তিরূপিণী মাকে। এই পুজোর উদ্যোক্তারা তাই মণ্ডপে তুলে ধরবেন সারদাদেবীর জীবনের নানা দিক।
৮১তম বর্ষে শোভাবাজার বড়তলা সর্বজনীনে শান্তির বার্তা। মণ্ডপের ভিতরের দেওয়াল সাজানো হচ্ছে প্রকৃতি থেকে ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসা প্রজাপতি, ফড়িং থেকে শুরু করে বিভিন্ন জীবের প্রতিকৃতি দিয়ে। মণ্ডপের সঙ্গে মানানসই প্রতিমা ও আলো। মহারাষ্ট্রের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ কেষ্টপুর সমরপল্লি সর্বজনীনে। ১৯তম বর্ষের এই পুজোয় সাবেক প্রতিমা, চন্দননগরের আলো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy