আকলিম খান।
এলাকায় দুষ্কৃতী বলে পরিচিত ছিল সে। তোলাবাজি, চুরি, ছিনতাই, মেয়েদের শ্লীলতাহানি-সহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে একাধিক বার গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। জেলও খেটেছে সে। সম্প্রতি পশ্চিম বন্দর থানায় ঘটে যাওয়া একটি ডাকাতির মামলায় তাকে খুঁজছিল পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার ১ নম্বর সোনাই রোডে একটি বহুজাতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার পরিত্যক্ত গুদামের ভিতর থেকে উদ্ধার হল আকলিম খান (৩০) নামে সেই যুবকের গলা কাটা দেহ।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাতঃকৃত্য সারতে সেখানে ঢুকেছিলেন এক ব্যক্তি। কিছুটা যাওয়ার পরেই তিনি দেখেন, এক যুবক মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে। এগিয়ে যেতেই দেখেন, যুবকের নলি কাটা এবং সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। চিৎকার করে স্থানীয় কয়েক জনকে ডেকে আনেন ওই ব্যক্তি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশকর্মীরা।
বাড়ি উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর এলাকায় হলেও আকলিম পশ্চিম বন্দর এলাকার ১ নম্বর নিমক মহল রোডের সিপিটি কোয়ার্টার্সে থাকত বলে জানায় পুলিশ। তবে গত কয়েক দিন ধরে সে নিমক মহল রোডের কোয়ার্টার্সে থাকছিল না। মেটিয়াবুরুজের কোনও একটি জায়গায় ছিল সে।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে যুবকের নলি কাটা দেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছে আকলিমের দেহ দেখে চমকে ওঠেন অফিসারেরা। কারণ, আকলিম কোনও দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে একাই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াত। ফলে তার কোনও শত্রু বা বিপক্ষ দল ছিল বলে গোয়েন্দারা মনে করতে পারছেন না। আকলিমকে যে খুন করা হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ায় তদন্তকারীরা মনে করছেন কোনও ব্যক্তি বা কোনও দল আকলিমকে সরিয়ে তার জায়গা নেওয়ার জন্য এই খুন করেছে।
পরিত্যক্ত গুদামের এই জায়গাতেই চিৎ হয়ে পড়েছিল দেহটি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
কী ভাবে খুন হল আকলিম?
পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, সম্প্রতি বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ায় আকলিমের শরীর ভাঙছিল। তার দেহ উদ্ধারের পরে তদন্তকারীদের অনুমান, সোমবার রাতের দিকে তাকে খুন করা হয়েছে। কারণ দেহে পচন ধরেনি। ওই গুদামে খুন করা হয়েছিল নাকি অন্য কোনও জায়গায় খুন করে দেহ সেখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থলের আশপাশে রক্তের দাগ মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে ভাঙা মদের বোতল ও গ্লাস। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, আকলিম ওই সন্ধ্যায় দু’-তিন জন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সেই বন্ধুদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। মৃতদেহের পকেট থেকে চারটি ফোন নম্বর মিলেছে,
সেই সূত্র ধরেও খোঁজ চলছে। দেহটি টেনে আনার চিহ্নও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ফলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আশপাশেই কোথাও খুন করা হয়েছে আকলিমকে। আকলিমের মোবাইলটি উদ্ধার হয়নি। তদন্তকারীদের অনুমান, আততায়ীরা সেটি নিয়ে পালিয়েছে।
পরিত্যক্ত গুদামের ভিতরে দেহটি উদ্ধার হওয়ায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পাননি তদন্তকারীরা। খবর পেয়েই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার অফিসারেরা স্নিফার ডগ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে আসেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (বন্দর) সৈয়দ ওয়াকার রেজা ও অন্যান্য আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy