Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খেলার মোড়কে স্বাধীনতার খোঁজ শমা, নেহাদের

আজ, বুধবার রাজাবাজার এলাকার দুধ কোঠির সামনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মেয়েদের খেলায়, কথায় মিশে যাচ্ছে নানা কিসিমের ছক-ভাঙা ভাবনার ছোঁয়াচ। দেশ জুড়ে স্বাধীনতা দিবস পালন নিয়ে বিতর্কের আবহে নিজস্ব, অভিনব ঢঙে দিনটা পালন করায় মেতেছে রাজাবাজারের প্রমীলা-ব্রিগেড।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৩০
Share: Save:

উত্তর কলকাতার ঘিঞ্জি মহল্লার ক্লাবঘরে ‘স্বাধীনতা’র মানে নিয়ে জমে উঠেছে আলোচনা।

সদ্য স্কুলের গন্ডি পেরোনো বা কলেজ পড়ুয়া, শমা পারভিন, নেহা খাতুন, ফারহিন নাজদের সঙ্গেই রয়েছেন পাকা গিন্নি খুরশিদা বেগমেরা। কারও কাছে স্বাধীনতা মানে চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, কারও কাছে আবার নিজের পছন্দে বিয়ে করা কিংবা স্টিয়ারিংয়ে বসে গাড়ি চালানো! স্কুলের ‘স্পোর্টস’-এ হাঁড়ি-ভাঙার ইভেন্টে মাটির হাঁড়িটা চুরমার করার সময়ে এই কথাগুলো বলা গেলে বেশ হতো, নিজেরাই ভেবেছেন মেয়েরা।

আজ, বুধবার রাজাবাজার এলাকার দুধ কোঠির সামনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মেয়েদের খেলায়, কথায় মিশে যাচ্ছে নানা কিসিমের ছক-ভাঙা ভাবনার ছোঁয়াচ। দেশ জুড়ে স্বাধীনতা দিবস পালন নিয়ে বিতর্কের আবহে নিজস্ব, অভিনব ঢঙে দিনটা পালন করায় মেতেছে রাজাবাজারের প্রমীলা-ব্রিগেড।

‘‘পতাকা তোলা, জাতীয়-সঙ্গীতের কোরাস তো বছর বছর করি, তার সঙ্গে স্বাধীনতার মানে নিয়ে যদি না-ই ভাবি, তা হলে আর কীসের লাভ?’’— প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন বছর আঠাশের শাহিনা জাভেদ। পাড়ার মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কাজটায় যিনি সলতে পাকাচ্ছেন।

স্কুল-কলেজের স্পোর্টসের ঢঙেই এক গুচ্ছ মজার খেলা ভাবা হয়েছে। যার মধ্যেই স্বাধীনতার অর্থ বেরিয়ে আসবে। হাঁড়ি-ভাঙা খেলাটাও তাই হয়ে উঠছে— মেয়েদের নিয়ে চিরকেলে ভাবনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতীক। সাপলুডো খেলার আদলে এক ধরনের সিগন্যাল গেমেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। ছক-কাটা কাপড়ে পা রেখে দু’জন-দু’জন করে চলবে খেলা। হয়তো প্রশ্ন করা হল, ‘মেয়ে হওয়া কি শুভ’? কিংবা ‘মেয়েদের জীবনের মোক্ষ কী’? কেউ যদি জবাব দেন অশুভ কিংবা বলেন, মেয়েদের জীবনে বিয়েই সব— তিনি পিছিয়ে পড়বেন। অন্য জন এগিয়ে যাবেন। টুকরো-টুকরো প্রশ্নের জবাবে মেয়েদের খেলাধুলো করা বা দত্তক নিয়ে মাতৃত্বের অধিকারের দাবিও উস্কে দেওয়া হচ্ছে। প্রতীকী ‘টাগ-অব-ওয়ার’ বা দড়ি টানাটানিতেও খেলাচ্ছলে সমাজের বাধার বিরুদ্ধে লড়বেন এই মেয়েরা। পারিবারিক হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করা শাহিনা কিংবা গাড়ি চালিয়ে পরিবারকে টানা পারভিন বেগমদের মতো অনেকেই বলবেন স্বাধীনতা নিয়ে ভাবনার কথা। শাহিনা বলছিলেন, ‘‘রাখি উৎসবেও আমরা এ বার ছক ভেঙেছি। বলেছি, এ রাখি মেয়েদের রক্ষা করার নয়, ঐক্যের-বন্ধুত্বের! তখনই স্বাধীনতা দিবস নিয়েও ভাবছিলাম।’’

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে মহল্লায় মেয়েদের স্বনির্ভর করা, পারিবারিক হিংসার মোকাবিলার কাজ পুরোদমে চালাচ্ছেন শাহিনা, তাহসিনা বানোদের মতো কয়েক জন। স্বাধীনতা দিবসে বাধা ঠেলে আরও একটু এগিয়ে যাবেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE