Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রেসিডেন্সিতে বিক্ষোভের মধ্যেই খুলল সংগ্রহশালা

হিন্দু হস্টেল খোলার দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যেই শুক্রবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

প্রতিবাদ: রাজ্যপালের সামনে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদ: রাজ্যপালের সামনে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

হিন্দু হস্টেল খোলার দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যেই শুক্রবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

উদ্বোধনের পরে ডিরোজিও হলে এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী এবং এই প্রতিষ্ঠানের দু’শো বছর উদ্‌যাপন কমিটির চেয়ারম্যান অনিন্দ্য মিত্র প্রেসিডেন্সির পুরনো গরিমা ফেরানোর উপরে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘‘সংগ্রহশালা গড়ে তোলা খুবই ভাল। কিন্তু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন অতীতের নিদর্শন হয়ে না থাকে।’’ শিক্ষা-মান অবনমনের অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গেই প্রেসিডেন্সিতে আসন খালি পড়ে থাকার দিকে আঙুল তুলছেন অনেকেই। অভিযোগ উঠছে ঐতিহ্য নষ্ট করারও। এই প্রেক্ষিতেই বিভিন্ন বক্তা মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য রক্ষায় জোর দেন।

উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াও পরে বলেন, ‘‘শুধু ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে থাকলে হবে না। বিশ্বমানে পৌঁছনোর জন্য আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’’ মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু এই সংগ্রহশালা গড়ে তোলায় সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, এই সংগ্রহশালায় এমন সব প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে যা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই। এ দিন রাজ্যপাল মন্তব্য করেন, এই সংগ্রহশালা গবেষক, পড়ুয়াদের কাজে লাগবে।

প্রেসিডেন্সির মূল ভবনের নীচের তলায় প্রায় দু’হাজার বর্গফুট জুড়ে তৈরি করা হয়েছে এই সংগ্রহশালা। রয়েছে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তার প্রতিলিপি, প্রেসিডেন্সির ছাত্র থাকাকালীন অমর্ত্য সেন কলেজ ম্যাগাজিনে যে লেখাটি লিখেছিলেন তাও ঠাঁই পেয়েছে সংগ্রহশালায়। পাশাপাশি রয়েছে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়-সহ বহু গবেষকের প্রেসিডেন্সিতে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু-সহ আরও বেশ কিছু কৃতী পড়ুয়ার হাজিরার খাতাও রাখা হয়েছে। প্রেসিডেন্সিতে থাকা দুষ্প্রাপ্য বেশ কিছু বইয়ের প্রতিলিপি, স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেসিডেন্সির ভূমিকা সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রামাণ্য দলিলও জায়গা পেয়েছে। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এ দিন জানান, এই সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে।

এ দিন সংগ্রহশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাক্তনী সংসদের বর্তমান সভাপতি জয়ন্ত মিত্র জানান, তিনি পড়ুয়াদের হিন্দু হস্টেল খোলার দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি আর হিন্দু হস্টেল ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই হিন্দু হস্টেল চালুর দাবি যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত।’’ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে সংস্কারের জন্য বন্ধ করা হয় হিন্দু হস্টেল। তখন আবাসিকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় রাজারহাটে। স্থির হয়েছিল, ১১ মাসের মধ্যে সংস্কার শেষ করে খোলা হবে হিন্দু হস্টেল। কিন্তু এত দিনেও তা হয়নি। কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থপতি পার্থরঞ্জন দাস আগে জানিয়েছিলেন, ইঁদুরের আক্রমণে হস্টেলের মেঝে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তা সারাতেই ছ’মাস লেগে যাবে। এর পরে আরও কাজ থাকবে, যা শেষ হতে হতে বছর ঘুরে যাবে। তবে পরিস্থিতি যা, তাতে এ বারও জুলাইয়ে নতুন পড়ুয়ারা এসে সেখানে থাকতে পারবেন না বলেই বিভিন্ন মহলের অনুমান।

মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু জানান, আজ, শনিবার প্রেসিডেন্সি সম্পর্কে মেন্টর গ্রুপের রিপোর্ট তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জমা দিচ্ছেন। তার আগে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাইছেন না। এ দিন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া স্পষ্ট ভাবে জানান, হিন্দু হস্টেল সংস্কারে সময় লাগছে। কবে তা খুলবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE