Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দেশভাগ নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরির প্রস্তাব কলকাতাতেও

দেশ ভাগের ৭০ বছর উপলক্ষে ভারতীয় জাদুঘরে আয়োজিত দু’দিনের এক আলোচনাচক্রের শেষ পর্বে শুক্রবার উঠে এল এমনই এক প্রস্তাব। দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয় নিয়ে চর্চায় নিযুক্ত গবেষকেরা শহরে জড়ো হয়েছিলেন তা ঘিরেই।

পাড়ি: দেশভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে আসা শরণার্থী-বোঝাই ট্রেন। —ফাইল চিত্র।

পাড়ি: দেশভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে আসা শরণার্থী-বোঝাই ট্রেন। —ফাইল চিত্র।

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

সত্তর বছর হলো ভাগ হয়েছে দেশ। তার ধাক্কা এখনও সম্পূর্ণ সামলে ওঠা যায়নি। তবু কি সময় আসেনি এ বার একসঙ্গে বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়ানোর? কেমন হয় যদি কলকাতাতেই তৈরি করা যায় একটা সংগ্রহশালা, যেখানে ধরা থাকবে শুধুই দেশ ভাগের অভিজ্ঞতা? পরবর্তী সব প্রজন্মও তা দেখে জানতে পারবে, দেশের ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটা।

দেশ ভাগের ৭০ বছর উপলক্ষে ভারতীয় জাদুঘরে আয়োজিত দু’দিনের এক আলোচনাচক্রের শেষ পর্বে শুক্রবার উঠে এল এমনই এক প্রস্তাব। দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয় নিয়ে চর্চায় নিযুক্ত গবেষকেরা শহরে জড়ো হয়েছিলেন তা ঘিরেই। তাঁদেরই একাংশই এই প্রস্তাব দিলেন। মনে করালেন, নানা দেশে ইতিমধ্যেই বহু মর্মান্তিক স্মৃতি ধরে রাখার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়াল হোক বা নম পেনের কিলিং ফিল্ডস— এমন নিদর্শন রয়েছে বিশ্বজুড়ে। এমনকী, সম্প্রতি অমৃতসরেও গড়া হয়েছে দেশ ভাগের স্মৃতি নিয়ে একটি সংগ্রহশালা। তবে শহর কলকাতা কেন এখনও পিছিয়ে? এই শহরের স্টেশন থেকে রাজপথ— সব তো আজও বহন করে চলেছে দেশ ভাগের হাহাকার।

কী রাখা হবে সেই সংগ্রহশালায়?

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ঋতুপর্ণা রায়ের ইচ্ছে, দেশ ভাগ নিয়ে তৈরি পেন্টিং, আলোকচিত্র থেকে সাহিত্য, সঙ্গীত— সবেরই জায়গা থাকবে সেখানে। সঙ্গে তুলে ধরা হবে উদ্বাস্তুদের জীবনের নানা দিক। এ-পারে চলে আসার সময়ে সঙ্গে করে আনা দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রও রাখা হবে। গল্পের আসরও বসতে পারে সেই ভবনে। গত কয়েক বছরে দেশ ভাগ সংক্রান্ত গবেষণা জোর দিতে অভ্যস্ত হয়েছে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণে। গল্পের আসরে তেমন বহু স্মৃতি উঠে আসতে পারে বলে মত উৎসাহীদের।

কিন্তু সংগ্রহশালা চাইলেই তো হয় না, তার জন্য প্রয়োজন নানা ব্যবস্থাপনার। যার মধ্যে অর্থ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা ছাড়া দেশ ভাগের ইতিহাস ধরে রাখতে সংগ্রশালার প্রয়োজনীয়তাই বা কী? ইতিহাস যে এখন অনায়াসেই ধরে রাখা যায় ডিজিটাল মাধ্যমেও। এ সব ঘিরে তৈরি হল বিতর্কও।

আলোচনাচক্রের প্রধান উদ্যোক্তা নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনে ইতিহাসের অধ্যাপক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন মত, কোনও বিশেষ বিষয়ে সংগ্রহশালা গড়তে হলে, সেই সংগ্রহের মাধ্যমে একটা আখ্যান উঠে আসা জরুরি। দেশ ভাগের ক্ষেত্রে তা খুবই সঙ্কটের। তিনি বলেন, ‘‘দেশ ভাগের গল্প বলতে গেলে পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’’ ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছে ভাগাভাগি। হিন্দু-মুসলমান, দুই ধর্মের মানুষই একই ভাবে রক্তপাত, লুঠ, হাহাকারের শিকার হয়েছেন। সত্তর বছর পরে সেই সব ঘটনা ফিরে দেখতে গিয়ে আবার বড় কোনও ভুল না হয়ে যায়, চিন্তিত তিনি।

শেখরবাবুর সঙ্গে একমত আর এক উদ্যোক্তা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ও ভারতীয় জাদুঘরের সচিব ও কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত। তাঁর বক্তব্য, এই কাজে যথেষ্ট নিরপেক্ষতা বজায় রাখা প্রয়োজন। তবেই উদ্যোগটি গবেষণায় নতুন দিশা। তবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এই ভাবনা এগোলে, সংগ্রহশালা গড়ার কাজে সঙ্গে থাকতে রাজি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Museum Partion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE