Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জলসঙ্কটে জেরবার ‘ওয়েট ল্যাব’

একই সমস্যা রয়েছে, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ক্যাম্পাসেও। সেখানকার ১২টির মধ্যে ৩টি বিল্ডিংয়ে পুরসভার পরিস্রুত জল পৌঁছয় না। সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভরসা ভূগর্ভস্থ জল।

সঙ্কট: পরীক্ষাগারে এই যন্ত্রেই হয় জল পরিশোধন। ছবি:সুদীপ ঘোষ।

সঙ্কট: পরীক্ষাগারে এই যন্ত্রেই হয় জল পরিশোধন। ছবি:সুদীপ ঘোষ।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০২:১৮
Share: Save:

লোকমুখে পরীক্ষাগারের নাম ‘ওয়েট ল্যাব’। কিন্তু সেখানেই পরিস্রুত জলের সঙ্কটে ভুগছেন গবেষকেরা। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের ভরসা করতে হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলের উপরে। তাতে নুন ও আয়রনের পরিমাণ এতই বেশি যে পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের শিক্ষকেরা।

একই সমস্যা রয়েছে, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ক্যাম্পাসেও। সেখানকার ১২টির মধ্যে ৩টি বিল্ডিংয়ে পুরসভার পরিস্রুত জল পৌঁছয় না। সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভরসা ভূগর্ভস্থ জল।

প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগারে যথেষ্ট পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। তা পরিষ্কার হওয়াও জরুরি। কিন্তু পরিস্রুত জলের জোগান না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন গবেষকেরা। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের শিক্ষকেরা জানান, কোনও কোনও পরীক্ষাগারে কলকাতা পুরসভার পরিস্রুত জলের লাইন রয়েছে। তবে তা হাতে গোনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করা হয়। প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক এনা রায় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মাটির উপরের বা নীচের, যে জলই হোক না কেন, পরীক্ষাগারে কখনওই তা সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। সব জল দুই থেকে তিন বার যন্ত্রের সাহায্যে পরিশোধন করতে হয়। মাটির উপরের জল, ভূগর্ভস্থ জলের তুলনায় পরিষ্কার। সেই জল যন্ত্রের মাধ্যমে পরিশোধিত করলে এক বছর পরে যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করলে যন্ত্রাংশ তিন সপ্তাহের মধ্যেই খারাপ হয়ে যায়। সমস্যার সমাধানে তাই জল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকেরা।

অভিযোগ, পরীক্ষাগারের বিকার, কনিকাল ফ্লাস্কগুলিও খারাপ হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। কারণ, গবেষণার ক্ষেত্রে কেনা জল পরিশোধন করে ব্যবহার হলেও, সাধারণ কাজে ওই একই ভাবে জলের ব্যবহার করা ব্যয়সাপেক্ষ। দেখা গিয়েছে, বিকারের জলের জন্য অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে গায়ের পরিমাপের দাগ। বায়োকেমিস্ট্রির এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘পানীয় জলের মান ভাল নয়। তাই বাড়ি থেকে জল আনেন প্রায় সবাই। আর পরীক্ষাগারে ওই জল ব্যবহারের তো প্রশ্নই নেই।’’ মাইক্রোবায়োলজির এক শিক্ষক অবশ্য জানাচ্ছেন, তাঁর ল্যাবে পুরসভার পরিস্রুত জলের লাইন রয়েছে। সেই জল পরিশোধন করে গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। ভূগর্ভস্থ জলের মান এতই খারাপ যে, কলগুলিও দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের সমস্যা পরিকাঠামোগত। ওই ক্যাম্পাসে একটি জলাধার রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ৩২ হাজার লিটার পুরসভার জল আসে। সেটা পানীয় জল। পাম্পের সাহায্যে মাটির নীচ থেকে দৈনিক প্রায় ৬০ হাজার লিটার জল ছাদের জলাধারে তোলা হয়। সেই জলের পরিমাণ বেশি। অথচ তা পরীক্ষাগারে ব্যবহারযোগ্য নয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ক্যাম্পাসের পরীক্ষাগারে পর্যাপ্ত জল জল পৌঁছতে এত গড়িমসি কেন?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিষয়টা তো জানিই না। খোঁজ নিয়ে দেখছি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এই সমস্যা দ্রুত মেটানোর জন্য বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wet Lab Water Purification Purified Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE