Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাইকেলের হিসেব নিয়ে জেরবার রাজ্য

সাইকেল বিতরণের চূড়ান্ত হিসেব এখনও রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি সাইকেল বিতরণের ওই হিসেব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

দু’বছর আগে, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কন্যাশ্রী প্রকল্পে শহরের স্কুলগুলির কিছু ছাত্রীকে সাইকেল দিয়েছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। তার পরে বদলে গিয়েছে সাইকেল বিতরণের প্রকল্প। কন্যাশ্রী নয়, এখন সবুজ সাথী প্রকল্পে দেওয়া হয় সাইকেল। এবং এই প্রকল্প রয়েছে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের অধীনে। কিন্তু সাইকেল বিতরণের চূড়ান্ত হিসেব এখনও রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি সাইকেল বিতরণের ওই হিসেব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর।

এর পরেই শুরু সমস্যার। কারণ এই চিঠি পাওয়ার পরে, স্কুলশিক্ষা দফতরের তরফে তড়িঘড়ি স্কুলগুলিকে ওই প্রকল্পের ‘উপযোগিতার শংসাপত্র’ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষ বলছেন, সাইকেল পাওয়ার পরেই তাঁরা উপযোগিতা শংসাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন দফতরে। এখন ফের নতুন করে শংসাপত্র চাইলে তা অসুবিধার, কারণ, সাইকেল পেয়েছেন এমন বহু ছাত্রীই এখন স্কুল পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছেন।

স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে সল্টলেকের বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে কলকাতার ২৮টি স্কুলকে ৫০৬টি সাইকেল দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, স্কুল কর্তৃপক্ষ সেগুলি ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করেন। সাইকেল বিতরণের প্রমাণপত্র অর্থাৎ উপযোগিতা শংসাপত্র দিতে হয় স্কুলশিক্ষা দফতরে। তার পরে তা জমা পড়ে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে। কিন্তু সেখানে সম্পূর্ণ রিপোর্ট পৌঁছয়নি বলে সূত্রের খবর।

বিকাশ ভবন জানাচ্ছে, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর স্কুলশিক্ষা দফতরে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে, ২০১৫ সালে সল্টলেকের বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে স্কুলগুলিকে যে সাইকেল দেওয়া হয়েছে সেগুলি ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে। তার পরে বিতরণের সেই তালিকা প্রমাণ-সহ চেয়ে পাঠায় ওই দফতর। এই চিঠি পেয়েই কলকাতার ২৮টি স্কুলকে তা পাঠিয়ে দেন স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা।

কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকারা। বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের যত বার যে ভাবে উপযোগিতা শংসাপত্র পাঠাতে বলেছে সে ভাবে পাঠিয়েছি। সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে ছবি তোলাও হয়েছে। সমস্ত কিছু স্কুলশিক্ষা দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও ফের কেন এই চিঠি পাঠানো হল, বুঝতে পারছি না।’’ তিনি জানান, নতুন করে উপযোগিতা শংসাপত্র করা কঠিন। কারণ ২০১৫ সালে যে সমস্ত ছাত্রীরা সাইকেলে পেয়েছিল তাঁরা সকলেই দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। বর্তমানে তাঁরা বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে তাঁদের খুঁজে বার করা সম্ভব নয়। পুরনো প্রমাণপত্রগুলিই আবার পাঠানো ছাড়া উপায় নেই বলে জানান তিনি।

কলকাতার অন্য একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাও বলেন, ‘‘তখন দফতর যে সমস্ত প্রমাণপত্র দিতে বলেছিল সেটাই দেওয়া হয়েছে। তার পরেও আমাদের উপরে এ ভাবে চাপ দেওয়ার অর্থ কী?’’ স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘অধিকাংশ স্কুলই ইতিমধ্যে সেই উপযোগিতা শংসাপত্র দিয়েছে। সেগুলি অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে পাঠানো হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি বাকি রয়েছে। ছুটি শেষ হলেই তাঁরা দিয়ে দেবেন।’’

প্রশ্ন উঠেছে, সেই হিসেব দাখিল করতে এত সময় লাগল কেন? স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্কুলের তরফ থেকে আগেই তা পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করছেন শিক্ষিকারা। তার পরেও হিসেব কেন অসম্পূর্ণ তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ হিসেব না দিলে অস্বচ্ছতা থেকে যায়। এটা দফতরের দেখা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE