বিসদৃশ: বালাই নেই নিয়মিত সাফাইয়ের। ঐতিহাসিক সৌধের উল্টোদিকে জমে রয়েছে আবর্জনা। প্রিন্সেপ ঘাটের সামনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
স্টেশন থেকে নেমেই বাঁ দিকে ঘাট সংলগ্ন এলাকায় ঢোকার পথে পড়ে আবর্জনার স্তূপ। গাছের নীচে জমিয়ে রাখা ময়লা পেরিয়েই ঢুকতে হয় সেখানে। ভিতরে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের মোড়ক, কাগজের প্লেট, বাটি, কাপ প্রভৃতি। যে সে ঘাট নয়। এই ছবি গঙ্গার তীরের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান প্রিন্সেপ ঘাট চত্বরের।
ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে তৈরি হয় এই ঘাট। সেখানেই জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতিতে তৈরি হয় একটি স্মৃতিসৌধ। বর্তমানে প্রিন্সেপ ঘাট চত্বরের জমির মালিকানা কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের।
এর এক দিকে, গঙ্গাতীর এবং চক্ররেলের প্রিন্সেপ ঘাট স্টেশন। অন্য দিকে, স্ট্র্যান্ড রোড। ২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গঙ্গাতীর সৌন্দর্যায়নের সময়েই বাবুঘাট থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত অংশে পেভার ব্লক বসিয়ে গঙ্গাতীরে হাঁটার রাস্তা, আলো এবং বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো হয়। গঙ্গাতীরের সেই অংশের রক্ষণাবেক্ষণও হয় ঠিকমতো।
দীর্ঘ বছর ধরে অবহেলিত পড়ে থাকার পরে প্রায় ষোলো বছর আগে রাজ্য পূর্ত দফতর স্মৃতিসৌধটির সংস্কার করে। বর্তমানে সেটির কোণা ভরে গিয়েছে পানের পিকে। পাশেই পড়ে বস্তা, ছেঁড়া কাপড়। প্রস্রাবের দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। চত্বরের এক দিকে বাতিল গার্ড রেল স্তূপ করে রাখা রয়েছে। স্মৃতিসৌধের সামনে চত্বরের অনেকটা অংশে ঘাস উঠে মাটি বেরিয়ে পড়েছে।
অভিযোগ, প্লাস্টিক নিয়ে ঢোকায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই এখানে। ফলে অবাধে খাবারের প্যাকেট নিয়ে ঢুকে পড়েন মানুষ। আবর্জনা ফেলার বিন থাকলেও যত্রতত্র ময়লা ফেলে যান তাঁরা। এত বড় চত্বরে নজরে পড়ে না কোনও নিরাপত্তারক্ষী। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিকেল-সন্ধ্যায় চত্বরের খুবই খারাপ অবস্থা হয়। তাঁদের দাবি, সকালের দিকে কখনও কখনও এক সাফাইকর্মী পরিষ্কার করতে আসেন। গাছের নীচের ওই অস্থায়ী ভ্যাটেই আবর্জনা জমিয়ে রেখে যান তাঁরা। মাসে এক বার সেখান থেকে গাড়ি এসে আবর্জনা তুলে নিয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক উইং কম্যান্ডার সিমরানপাল সিংহ বিরডি বলেন, ‘‘প্রিন্সেপ ঘাটের জমির মালিকানা কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। তা দেখভাল করে সেনাবাহিনী। সে ক্ষেত্রে ওই জমিতে কোনও কিছু তৈরি করা বা ভাঙার কাজে সেনাবাহিনীর অনুমতি আবশ্যিক। কিন্তু ওই জায়গা পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব প্রতিরক্ষা দফতরের নয়। ওই দায়িত্ব কার বলতে পারবে কলকাতা পুরসভা।’’
প্রিন্সেপ ঘাটের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি পুর-কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই জায়গাটি যাদের মালিকানায়, পরিচ্ছন্নতা রক্ষাতেও তাদেরই দায়িত্ব থাকার কথা। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, স্মৃতিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সম্ভবত পূর্ত দফতরের। রাজ্যের পূর্ত দফতরের সিটি ডিভিশনের অধীন এই প্রিন্সেপ ঘাট। কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কার নিয়ে কিছু বলতে নারাজ সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিক।
স্মৃতিসৌধের দেখভাল এবং চত্বর সাফাইয়ের দায়িত্ব তবে কার? সেই প্রশ্ন থেকেই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy