খটখটে সেপ্টেম্বর দেখে আশা জেগেছিল পুজোকর্তাদের মনে। ভেবেছিলেন, এ বার বোধহয় দুর্গার মণ্ডপ তৈরিতে বাধ সাধবেন না বরুণদেব। কিন্তু হাওয়া অফিস আঁচ করছে, ততটাও বোধ হয় মসৃণ হবে না মণ্ডপের কাজ। যার ইঙ্গিত শুক্রবারই দিয়ে রেখেছে প্রকৃতি।
দুপুর ১টা। বৃষ্টির দাপটে চার দিক কার্যত সাদা হয়ে গিয়েছে। ইএম বাইপাসের এক পাশে তখন সার বেঁধে দাঁড়িয়ে গাড়ি। ভরদুপুরেও দপদপ করছে গাড়ির আলো! যাদবপুর-গড়িয়া এলাকায় যেন ধুয়ে যাচ্ছে চারপাশ। ঘনঘন বাজ পড়ার শব্দে আঁতকে উঠছেন মানুষ।
এ সবের বাইরেও বুক দুরুদুরু করছে আরও অনেকের। তাঁরা কলকাতার বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তা। বৃষ্টির দাপট দেখে এ দিন ঘনঘন ফোন ঘুরিয়েছেন তাঁরা। কারও প্রশ্ন, ‘‘এটা কি নিম্নচাপের বৃষ্টি?’’ কেউ বা জানতে চেয়েছেন, ‘‘কলকাতায় মেঘ ভেঙে পড়ল কি না।’’
তবে হাওয়া অফিস অবশ্য জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ দানা বাঁধেনি। এ দিন মূলত দক্ষিণ কলকাতায় যে বৃষ্টি হয়েছে, তার পিছনে রয়েছে একটি বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ। তবে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলতে যে ব্যাপকতা বোঝায়, তেমনও কিছু হয়নি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়।
কিন্তু হঠাৎ করে এমন দাপুটে মেঘ তৈরির কারণ কী?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, আসাম থেকে ওড়িশা পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। তার ফলেই বায়ুচাপের একটা তারতম্য তৈরি হচ্ছে। জলীয় বাষ্প ও ঠান্ডা শুকনো হাওয়ার মিশেলে কিছু কিছু এলাকায় বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে। তা থেকেই অল্প এলাকার উপরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। রেডার চিত্র বিশ্লেষণ করে এ দিন আবহবিদেরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ কলকাতার উপরে তৈরি হওয়া মেঘটির উচ্চতা ছিল প্রায় ৬ কিলোমিটার।
আর এই ৬ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘই এ দিন ফাঁপরে ফেলেছে বেহালা ক্লাবের সায়ন্তন ভট্টাচার্য, নতুন দলের সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো পুজোকর্তাদের। বেহালা ক্লাবের পুজোকর্তা সায়ন্তন ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘কাজ তো ভালই চলছিল। বৃষ্টি এসে সব তালগোল পাকিয়ে দিয়ে গেল।’’ সন্দীপন আবার বলছেন, ‘‘বৃষ্টি তো ছিলই, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া! অনেক কিছুই ছিঁড়ে গিয়েছে।’’ মণ্ডপের ক্ষতি না হলেও বৃষ্টিতে কারিগরেরা কাজ করতে পারেননি দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দিরের পুজোয়।
উত্তরে অবশ্য এ দিন তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু আগামী কয়েক দিনে হতে পারে কি?
আবহবিদেরা বলছেন, বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির হাল-হকিকত খুব বেশি আগে থেকে দেওয়া যায় না। তবে পরিমণ্ডলের যা পরিস্থিতি, তাতে যে কোনও সময়ে যে কোনও জায়গাতেই আচমকা বৃষ্টি হতে পারে।
আকাশ যতই পরিষ্কার থাকুক না কেন, তাই কপালের ভাঁজ কমছে না পুজোকর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy