Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মিছিল-অবরোধ আর পুজোর ব্যারিকেডে গতিহারা শহর

স্বামীকে বিবাদী বাগের অফিস থেকে তুলে ক্যামাক স্ট্রিটে চিকিৎসকের কাছে যাবেন বলে বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ যাদবপুর থেকে বেরিয়েছিলেন অমিতা দাস। সন্ধ্যা সাতটায় চিকিৎসকের কাছে পৌঁছনোর কথা।

রুদ্ধ পথ। মঙ্গলবার, কসবায়। — নিজস্ব চিত্র

রুদ্ধ পথ। মঙ্গলবার, কসবায়। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৩১
Share: Save:

স্বামীকে বিবাদী বাগের অফিস থেকে তুলে ক্যামাক স্ট্রিটে চিকিৎসকের কাছে যাবেন বলে বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ যাদবপুর থেকে বেরিয়েছিলেন অমিতা দাস। সন্ধ্যা সাতটায় চিকিৎসকের কাছে পৌঁছনোর কথা। যানজট ঠেলে যখন অমিতাদেবী স্বামীর অফিসে পৌঁছলেন, তখনই ঘড়ির কাঁটা সাতটা পেরিয়ে গিয়েছে।

গোলপার্কের দিবাকর নন্দী কসবা কানেক্টর ধরেই বিমানবন্দরে যান। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিজন সেতু পেরোতেই থমকাল গাড়ি। রাস্তার দু’ধারে পুজোর জন্য বাঁশের ব্যারিকেড। যানবাহনের রাস্তা কমে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু যান শাসনে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা রাখেনি পুলিশ। কসবা থানা পেরিয়ে অলিগলি দিয়ে কোনও রকমে উঠলেন ই এম বাইপাসে। একটু এগিয়েই ফের আটকে গেল গাড়ি। সৌজন্যে পরমা উড়ালপুল।

শুধু রাস্তায় দু’ধারে পুজোর দর্শনার্থীদের জন্য বাঁশের ব্যারিকেডই নয়, মঙ্গলবার তার সঙ্গী হয় রাজনৈতিক দলের মিছিল ও অবরোধ। ফল— কাজের দিনে সকাল থেকে বিকেল শহরের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় যানজটে নাকাল সাধারণ মানুষ। পুলিশ সূত্রে খবর, পুজোর মরসুমেও এখনই যানজট থেকে মুক্তির আশা নেই শহরের। লালবাজার সূত্রে খবর, আজ, বুধবার তৃতীয়াতেও দু’টি সংগঠনের প্রতিবাদ মিছিল আছে মধ্য কলকাতায়। তার জেরে ফের মধ্য, উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে যানজটের আশঙ্কা করছেন পুলিশকর্তারা। একটি সংগঠনের মিছিল দুপুর থেকে কলেজ স্কোয়ার থেকে বেরোবে।
অন্য মিছিলটি দুপুরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (হাজি মহমম্দ মহসিন স্কোয়ার) থেকে বেরিয়ে শেষ হবে ধর্মতলায়।

লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন বিকেলে টেট-এর প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্ত এবং শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ১২টি বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠনের মিছিল কলেজ স্কোয়ার থেকে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, লেনিন সরণি হয়ে মৌলালি পৌঁছয়। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, কলেজ স্কোয়ারে প্রায় কয়েকশো লোক জড়ো হলে কলেজ স্ট্রিট ও নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটে যান চলাচল থমকে যায়। তখনই যানজটের শুরু। বিকেল ৩টের পরে মিছিল লেনিন সরণি ধরে মৌলালির দিকে রওনা দেয়। তখন ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মিছিলের কারণে থমকে যায় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউও। মধ্য ও পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় যানচলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, এর পরে মৌলালিতে পৌঁছে অবরোধে বসেন মিছিলকারীরা। স্তব্ধ হয়ে যায় এজেসি বসু রোড, এপিসি রায় রোড, বেলেঘাটা মেন রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তা। পরে অবরোধ উঠলেও রেশ ছিল রাত পর্যন্ত।

পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিলের আগেই যানজটের কবলে পড়েছিল গড়িয়াহাট-বালিগঞ্জ-কসবার রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ও রাসবিহারী কানেক্টর। একই অবস্থা হয় হাতিবাগান, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ শহরের বড় মণ্ডপগুলির সামনের রাস্তা। পুলিশ জানায়, পুজোর ক’দিন দর্শনার্থীদের সুবিধের জন্য ওই সব রাস্তার দু’ধারে তিন থেকে চার ফুট রাস্তা আটকে বাঁশ এবং কাঠের ব্যারিকেড করা হয়েছে। ফলে রাস্তায় গাড়ির ভিড়ে নাজেহাল হন সাধারণ মানুষ। সামাল দিতে বেগ পেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকেও।

অন্য দিকে, হাতিবাগানের অরবিন্দ সরণি এবং বিধান সরণিতে রাস্তার উপরে বিকিকিনি চলায় এবং ফুটপাথ থেকে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসায় গড়িয়াহটের মতো সেখানেও রাত পর্যন্ত গাড়ির গতি শ্লথ ছিল।

পুজোর জন্য রাস্তায় করা ব্যারিকেড থেকে যানজট হয়েছে তা অবশ্য মানতে চাননি লালবাজারের কর্তারা। এক পুলিশ কর্তার কথায়, প্রতি বারই পুজোর আগে ওই সব রাস্তায় ব্যারিকেড করা হয়। গাড়ির গতি এতে কিছুটা বাধা পেলেও দর্শনার্থীদের যাতায়াতের পথ সুগম করতেই তা করা হয়ে থাকে। এ দিন লালবাজারে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রাজীব মিশ্র বলেন,‘‘আমরা যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশকর্মী নামিয়েছি। সব রাস্তাতেই স্বাভাবিক যান চলাচলের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rally Barricade daily passenger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE