জরা: বাসযোগ্য নয়, তবু নিরুপায় হয়ে সেই বাড়িতেই বিপদ মাথায় দিনযাপন। মহাত্মা গাঁধী রোডে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
যেতে পারি। কিন্তু কোথায় যাব?
মাথা গোঁজার আস্তানাই যে এখন সাক্ষাৎ মৃত্যুর পরোয়ানা, ওঁরা তা বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু যাওয়ার জায়গা নেই যে! জীর্ণ, ঝুরঝুরে বাড়ি আঁকড়েই তাই রয়ে গিয়েছেন বাসিন্দারা। যেন ক্রিজ কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটসম্যান। আউট না হলে নড়ানো যাবে না কিছুতেই।
দেওয়ালে অসংখ্য ফাটল। বাড়ির ছাদে মাথা তুলেছে বট-অশ্বত্থ। সিঁড়ি থেকে রেলিং— সবেরই ভগ্নদশা। বাড়ির বাইরে ঝুলছে পুরসভার লটকে দেওয়া ‘বিপজ্জনক’ নোটিস। তবু বাড়ি ছেড়ে নড়তে রাজি নন কেউ।
মঙ্গলবার তালতলায় এমনই একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়ায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনার পরে বুধবার শহরের বিভিন্ন জীর্ণ বাড়ি ঘুরেও বাসিন্দাদের হেলদোল দেখা গেল না। প্রত্যেকের মুখে একই কথা, ‘‘আমাদের বিকল্প জায়গা কোথায়? বাড়ির মালিক কোনও সহযোগিতা না করলে এ ভাবেই থাকতে হবে।’’ বাড়ির মালিকেরা আবার ভাড়াটেদের বিরুদ্ধেই অসহযোগিতার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন।
তালতলায় ভেঙে পড়া বাড়ির উল্টো দিকেই ৯, ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট। বাড়িটির অবস্থা শোচনীয় বললেও কম বলা হয়। ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো ওই বাড়িতে পুরসভা আগেই বিপজ্জনক নোটিস ঝুলিয়েছে। তা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রয়েছে চারটি পরিবার। নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোতলার এক ভাড়াটে বলেন, ‘‘বাড়িটি এক প্রোমোটার নেবেন বলে শুনেছি। কিন্তু বাড়ি ভাঙার পরে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সে বিষয়ে প্রোমোটার কিছু বলছেন না। তাই বাড়ি ছা়ড়তে পারছি না।’’
চোখের সামনেই তো উল্টো দিকের বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে! তা-ও এখানে থাকবেন? জবাবে এক মহিলা ভাড়াটে বলেন, ‘‘বিকল্প ব্যবস্থা না হলে যাব কোথায়? দুর্ঘটনা ঘটলেও আমাদের কী-ই বা করার আছে?’’
মৌলালির কাছে ১২১, লেনিন সরণি। দোতলায় উঠতে গেলে মনে হয়, ‘ভুতুড়ে’ বাড়িও হার মানবে। সিঁড়ি থেকে রেলিং, সবই যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে! পুরসভা একাধিক বার ‘বিপজ্জনক’ নোটিস দিয়েছে। ছ’জন ভাড়াটে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এখন রয়েছেন পাঁচ জন। দোতলার ভাড়াটে, দুই ভাই দেবতোষ মণ্ডল ও অনুতোষ মণ্ডল প্রায় চার পুরুষ ধরে এ বাড়িতেই আছেন। দেবতোষের অভিযোগ, ‘‘প্রোমোটিং করবেন বলে বাড়ি যিনি কিনেছেন, তিনি কোনও সহযোগিতা করছেন না। এখানে আমাদের পাঁচ পুরুষের বাস। চলে গেলে কোথায় থাকব? এই অবস্থায় বিপদ ঘটলে সেটাই মাথা পেতে নিতে হবে।’’
উত্তর কলকাতার চার নম্বর দুর্গাচরণ ব্যানার্জি স্ট্রিট কিংবা ১২৯/৭ নম্বর এম জি রোডের দু’টি বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দারাও মালিককেই দুষছেন। এম জি রোডের চারতলা বাড়িতে ৩২ জন ভাড়াটে। নীচের তলায় চল্লিশ বছরের বিউটি পার্লার মৌসুমি ঘোষের। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির মালিককে মেরামতির কথা বললেও তিনি কোনও কথাই বলছেন না।’’ যদিও বাড়ির মালিক প্রমোদ চন্ডক ভাড়াটেদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ভাড়াটেরা বহু বছর ভাড়া দেন না। ওঁরা কোনও কথাও শুনছেন না।’’ তিনি জানান, বাড়িটি ভেঙে নতুন করে গড়তে পুরসভার কাছে নকশা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন দিলেই ভাঙার কাজ শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy