কমিশনারেটের চার বছর পূর্তির দিনেই ফের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠল হাওড়ায়। তিন দিনের মধ্যে দু’টি খুন এবং ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনার পরে এ বার সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা ঘটল ঘনবসতিপূর্ণ গৃহস্থ পাড়ায়।
মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানা এলাকার ব্রজনাথ লাহিড়ী লেনে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, এ দিন ভোরে জানলার গ্রিল খুলে পাঁচ-ছ’জন ডাকাত বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সকলকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে দাঁড় করিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে লুঠপাট চালিয়ে নিয়ে গিয়েছে নগদ টাকা ও লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সোনার গয়না। যাওয়ার আগে দুষ্কৃতীরা ফ্রিজ খুলে খাবার ও চকোলেটও খেয়ে গিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
মাসখানেক আগেই সাঁতরাগাছি মোড়ে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সোনার দোকানের শাটার ভেঙে সমস্ত সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীদের দল। এর পরে গত শনিবারই শিবপুরে দীনবন্ধু কলেজের উল্টো দিকে ভরা বিকেলে সকলের চোখের সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন তৃণমূলের এক সক্রিয় কর্মী। ওই দিনই লিলুয়ায় প্রকাশ্য রাস্তায় খুন হন রেলের এক কর্মী। সোমবার বিকেলে হাওড়া ব্রিজের পাশে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের আবাসনে ফাঁকা ফ্ল্যাট পেয়ে দুই দুষ্কৃতী তালা ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢুকে লুঠপাট চালায়। এই ঘটনার পরের দিনই চ্যাটার্জিহাট এলাকার কোনা এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন ব্রজনাথ লাহিড়ী লেনে এই ডাকাতির ঘটনা কার্যত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশি নিষ্ক্রীয়তাকে বেআব্রু করে দিয়েছে।
কী ঘটেছিল এ দিন? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, হাওড়া হোমসের কাছে ব্রজনাথ লাহিড়ী লেনে কয়েক বছর আগে বাড়ি কিনে ভাইদের নিয়ে বসবাস করছিলেন মইদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার ভোরে পরিবারের সকলে যখন ঘুমোচ্ছেন, তখন নীচের তলায় একটি জানলার গ্রিল খুলে বাড়িতে ঢুকে পড়ে ৫-৬ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের মধ্যে দু’জনের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সকলকে ঘুম থেকে তুলে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে লুঠপাট শুরু করে। চাবি চেয়ে বাড়ির প্রত্যেকটি আলমারি খুলে সমস্ত সোনার গয়না ও নগদ টাকা লুটপাট করে। প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে লুঠপাট চালানোর পরে ফের গ্রিল খোলা জানলা দিয়েই পালিয়ে যায় ডাকাতরা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, ডাকাতদের মধ্যে এমন কেউ ছিল যে পরিবারের সব খবর রাখে। কারণ পরিবারের কে-কোন ঘরে শুয়েছেন বা টাকা-গয়না কোথায় রয়েছে, তা জানাই ছিল ডাকাতদের।
এ দিন সকালে ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় এলাকার বাসিন্দারা ভিড় জমিয়েছেন বাড়ির সামনে। হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে এসেছেন তদন্ত করতে। এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার এমন অবনতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়েরা। এলাকার বাসিন্দা সমরেশ সামন্ত বলেন, ‘‘এই পাড়ায় এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি। কোনা এক্সপ্রেসে রাতে পুলিশি টহলদারি সত্ত্বেও কী করে এই দুঃসাহসিক ডাকাতি হল, তা ভেবে আমরা আতঙ্কিত।’’
আতঙ্কিত ইলসাম পরিবারের সদস্যেরা। ঘটনার পর থেকে পুলিশ ছাড়া তাঁরা কাউকেই বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন না। পরিবারের এক সদস্য সাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা চাই না এ নিয়ে কোনও প্রচার হোক। ওরা যে ভাবে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে রেখে শাসাচ্ছিল, এর পরে সংবাদ মাধ্যমকে কিছু বললে হয়তো রাস্তাতেই মেরে দেবে।’’
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘ডাকাতির একটা ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই দলটাকে ধরে ফেলব।’’
কিন্তু একের পর এক খুন, চুরি-ডাকাতি হয়ে চললেও আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কথা মানতে নারাজ পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, ‘‘এই কয়েকটা ঘটনা দিয়ে প্রমাণ যায় না, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। অপরাধ হবেই। সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের কাজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy