Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আগেই তো জানত স্কুল, বলল কোর্ট

স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছেলের লেখাপড়া নিয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সঙ্কল্পের বাবা দেবাশিস দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪১
Share: Save:

কোনও বাবা-মাই চান না তাঁদের সন্তানের প্রতিবন্ধকতাকে হাতিয়ার করে সমাজের কাছ থেকে অতিরিক্ত সহানুভূতি আদায় করতে। বালিগঞ্জের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ছাত্র সঙ্কল্প দাসের লেখাপড়া নিয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানিতে শুক্রবার এমনই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী।

স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছেলের লেখাপড়া নিয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সঙ্কল্পের বাবা দেবাশিস দাস। বৃহস্পতিবার বিচারপতি চক্রবর্তী নির্দেশ দিয়েছিলেন, ওই ছাত্রের বাবা যে অভিযোগ জানিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবী এ কে বাগ আদালতে এ দিন জানান, ওই ছাত্র যে ডিসলেক্সিক তা প্রমাণ করার মতো কোনও নথি স্কুলে পেশ করা হয়নি। সঙ্কল্পের প্রতি স্কুল কর্তৃপক্ষের সহানুভূতি রয়েছে, কিন্তু তাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের হাত-পা বাঁধা। সে কথা শুনে ওই মন্তব্য করেন বিচারপতি।

এ দিন বালিগঞ্জের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুমন লতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন একই কথা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সঙ্কল্পের প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র দেখাতে পারলেই আর কোনও সমস্যা করা হবে না স্কুলের তরফে।’’ কিন্তু সঙ্কল্পের মা খুকু দাসের বক্তব্য, তাঁর ছেলের ডিসএবিলিটি সার্টিফিকেট না থাকলেও, বাকি সব নথিপত্র দেওয়া হয়েছে স্কুলে। আগে তাঁদের বোর্ড থেকেও জানানো হয়েছিল, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিলেই পড়াশোনায় আর বাধা থাকবে না সঙ্কল্পের।

কিন্তু এ দিন বালিগঞ্জের ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যকেই সমর্থন জানিয়েছেন সিবিএসই-র আইনজীবী ইউ এস মেনন। তিনি আদালতে জানান, ওই ছাত্র যে ওই রোগে আক্রান্ত তা সিবিএসই বোর্ডের অজানা। তা শুনে বিচারপতি চক্রবর্তী দেবাশিসবাবুর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পেশ করা নথি খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে বিচারপতি একটি নথি দেখিয়ে আইনজীবী মেননের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘বোর্ডের কাছে যদি সঙ্কল্পের ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য না থাকে, তা হলে তার দশম শ্রেণির পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডে ‘ডিসলেক্সিয়া’ কথা লেখা থাকল কী করে? সেই অ্যাডমিট কার্ড তো সিবিএসই বোর্ডই তাকে দিয়েছিল।’’ আইনজীবী মেনন ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে স্কুলের আইনজীবী জানান, তিনি মেনে নিচ্ছেন ওই ছাত্র ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত এবং তার প্রমাণ রয়েছে। প্রধান শিক্ষিকাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, যা নথি আছে তা যথেষ্ট নয়।

দেবাশিসবাবুর আইনজীবী আদালতে নথি দেখিয়ে জানান, ২০১৫ সালে দু’বার স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সিবিএসই বোর্ডের রিজিওনাল কর্তৃপক্ষকে সঙ্কল্পের কথা জানিয়ে তার জন্য বিশেষ বিষয়ের পাঠ্যক্রমের ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেন। সেই মতো ইংরেজি ছাড়াও পেন্টিং, হোম সায়েন্স, মিউজিকের মতো বিশেষ বিষয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন সিবিএসই কর্তৃপক্ষ। সেই সব বিষয়ে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় ওই ছাত্র। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার এই বিশেষ কয়েকটি বিষয় নিয়ে পরীক্ষায় বসাকে ঘিরেই সমস্যা শুরু করেন। এর পরেই স্কুলের তরফে অসহযোগিতা শুরু হয় বলে অভিযোগ। এমনকী অভিযোগ, গত অগস্টে পেন্টিংয়ের প্রশ্নপত্র দিয়ে তা তার থেকে কেড়েও নেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী আরও জানান, তাঁর মক্কেল স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, হোম সায়েন্স এবং সঙ্গীত বিষয়ক পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের বেতন তিনি দেবেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্কুল তাঁর মক্কেলের ছেলেকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিচ্ছেন না। বিচারপতি সব পক্ষের বক্তব্য শুনে জানিয়ে দেন, তিনি এই মামলার রায় দিতে পারেন আগামী মঙ্গলবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE