Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বাড়ি বিক্রির কথা কবুল মালিকের

হাতুড়ির ঘায়ে ধূলিসাৎ স্কুল, বিক্ষোভের মুখে ধৃত প্রোমোটার

রাজারহাট রোডে দোতলা বাড়িটির উপরের তলায় চলে ব্যক্তিগত মালিকানার স্কুলটি। একতলায় রয়েছে দোকান। বাড়ির পুরনো মালিকের দাবি, বছর তিন-চার আগেই স্কুল ও ভাড়া দেওয়া দোকান-সহ পুরো জায়গাটিই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল এক প্রোমোটারকে।

ভাঙচুরের পরে সেই স্কুল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ভাঙচুরের পরে সেই স্কুল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

রাজারহাট রোডে দোতলা বাড়িটির উপরের তলায় চলে ব্যক্তিগত মালিকানার স্কুলটি। একতলায় রয়েছে দোকান। বাড়ির পুরনো মালিকের দাবি, বছর তিন-চার আগেই স্কুল ও ভাড়া দেওয়া দোকান-সহ পুরো জায়গাটিই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল এক প্রোমোটারকে। সেই প্রোমোটার শনিবার স্কুলের অংশটি ভেঙে দেন। আর তার জেরেই এ দিন সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজারহাট রোডের দশদ্রোণ এলাকা। প্রোমোটারকে গ্রেফতারের দাবিতে রাজারহাট রোড অবরোধ করেন স্কুলপড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকেরা। বেলার দিকে অবশ্য মিজানুর রহমান নামে ওই প্রোমোটারকে গ্রেফতার করে বাগুইআটি থানার পুলিশ।

রাজারহাট রোডের ওই দোতলা বাড়িটিতে ১৯৯৭ সাল থেকে চলছে লীলাদেবী মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন নামে ওই স্কুলটি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৫০। তাঁদের অভিযোগ, শনিবার গভীর রাতে ওই প্রোমোটার স্কুলের ভিতরে ঢুকে ক্লাসরুম, অফিসঘর-সহ গোটা স্কুলটিই ভেঙে ধূলিসাৎ করে দেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘কোনও নোটিস ছাড়াই স্কুল ভাঙার কাজ শুরু করেন ওই প্রোমোটার। শনিবার স্কুলে পরীক্ষা ছিল। স্কুল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা সকালে স্কুলের সামনে এসে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। সকালে যখন ভাঙার কাজ চলছে, তখন আমি এসে বাধা দিই। কিন্তু আমায় রাস্তায় ফেলে পেটায় প্রোমোটারের লোকজন।’’

ঘটনাস্থলে গিয়ে শনিবার দেখা যায়, স্কুলের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ক্লাসঘরের বেঞ্চগুলি বার করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের বাইরের দেওয়ালে মনীষীদের ছবির উপরে পড়েছে সাদা রঙের প্রলেপ। ভেঙে দেওয়া হয়েছে স্কুলের ছাদ থেকে দেওয়াল— সব কিছুই।

পুলিশ জানায়, ওই প্রোমোটারের গা়ড়ি ঘিরে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে আটক করা হয়। পরে বেলার দিকে গ্রেফতার হন তিনি।

পুলিশের গাড়িতে বসে মিজানুর বলেন, ‘‘আমি ওই বাড়িটি কিনে নিয়েছি। স্কুলকে ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি নতুন জমি কেনার জন্য। এমনকী, মিউটেশনও করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।’’ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ ভাবে একটি স্কুল ভেঙে দেওয়া কতটা ন্যায়সঙ্গত? উত্তরে মিজানুর বলেন, ‘‘স্কুলও তো ব্যবসা করছে।’’

বিধাননগরের এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তি জায়গাটি কিনে নিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। তবে জায়গাটি এখনও অন্যের অধীন। তাই তিনি জায়গাটি বলপূর্বক দখলের চেষ্টা করেছিলেন বলেই ধরে নেওয়া হবে। তা ছাড়া, ওই ব্যক্তির এমন ব্যবহারের জন্য আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হবে।’’

স্কুল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য মিজানুরের দাবি মেনে নিয়েছেন। স্কুলের তরফে গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রোমোটার আমাদের জমি কিনতে ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন ঠিকই, তবে সে জমির এখনও মিউটেশন হয়নি। নতুন
জমিতে মিউটেশন ছাড়া, নকশা ছাড়া আমরা কী করে বাড়ি তৈরি করব? প্রোমোটার আমাদের কোনও নোটিস না দিয়েই বাড়ি ভেঙেছেন।’’

এ দিন দুপুরে নিজের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ঘটনাস্থল যান বিধাননগর পুর নিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাস্থলে তাঁকে দেখেই অভিভাবকেরা এক দফা বিক্ষোভ দেখান। যে কোনও উপায়ে সোমবার থেকে স্কুল চালু করার দাবিও কাউন্সিলরের কাছে জানান তাঁরা। পরে স্বাতী বলেন, ‘‘মিউটেশনের বিষয়ে স্কুল আমায় কিছু জানায়নি। তবে, যেহেতু এখানে ছোটদের লেখাপড়ার বিষয়টি জড়িত, তাই চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে স্কুল চলার মতো একটা ব্যবস্থা করা যায়।’’ ধ্বংস স্তূপ সাফাই করতে পুর নিগমের শ্রমিকদের পাঠানো হয় স্কুলে। দরমা, ত্রিপল সব কিছুর ব্যবস্থাও করা হয়।

ওই দোতলা বাড়িটির একতলায় ১০টি দোকান, একটি গুদামঘর, একটি ডাক্তারখানাও রয়েছে। সেই দোকানদারেরাও স্কুল ভাঙার ঘটনায় প্রোমোটারের ভূমিকার নিন্দা করেছেন। তবে তাঁরা এমনও জানিয়েছেন, বাড়ি ভেঙে প্রোমোটিং শুরুর আগে প্রোমোটার তাঁদের সঙ্গেও পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন।

স্কুল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবশ্য তোপ দেগেছেন ওই বাড়িটির প্রাক্তন মালিক আবুল হাসান ও মাজিদা খাতুন। সম্পর্কে তাঁরা মা ও ছেলে। ওই দোতলা বাড়িটির অদূরেই তাঁদের বাড়ি। আবুলের কথায়, ‘‘ভাড়াটে সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ওই বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিলাম। স্কুলটি চলত ২৭০০ বর্গফুটের উপরে। ওই জায়গার ভাড়া যেখানে হওয়া উচিত মাসে ৩০ হাজার টাকা, সেখানে স্কুল দিত মাত্রই চার হাজার। ভাড়াটে তুলতে না পেরে জায়গাটি ২০১৪ সালে বিক্রি করে দিয়েছিলাম ওই প্রোমোটারকে। অনেক বার স্কুলকে ভাড়া বাড়াতে বলেছি। কিন্তু স্কুল ভা়ড়া বাড়ায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Promoter School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE