আসমিনা পরভিন
রবিবার স্কুলের ‘স্পোর্টস ডে’। মাঠে তারই প্রস্তুতি সেরে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল বছর পনেরোর আসমিনা পরভিন। রাস্তায় এক বেপরোয়া ট্রেলার উল্টো দিকে ঘুরতে গিয়ে পিষে দেয় তাকে। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার নিমক মহল রোডের ঘটনা। পুলিশ জানায়, ট্রেলারের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর নাম ধর্মেন্দ্র পাসোয়ান। আটক করা হয়েছে ট্রেলারটি।
আসমিনার স্কুল ও পরিবার সূত্রের খবর, খেলাধুলোয় বরাবরই প্রথম সারিতে থাকত ওই কিশোরী। এ দিনও মাঠের শেষে দড়ি সে-ই ছুঁয়েছিল সবার প্রথম। কিন্তু মিনিট পনেরোর মধ্যেই যে সব শেষ হয়ে যাবে, দুঃস্বপ্নেও তা ভাবেননি তাকে উৎসাহ দেওয়া শিক্ষিকারা। স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষিকা অঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সাড়ে ন’টা নাগাদ স্কুল ছুটি হতেই আসমিনাকে বললাম, বাড়ি গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে। তার একটু পরেই যে দৃশ্য দেখলাম, ভেবেই শিউরে উঠছি! ওকে কোনও দিন রক্তাক্ত অবস্থায় ও ভাবে দেখব, ভাবিনি।’’
দুর্ঘটনার খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অবরোধ তুলতে তারা লাঠিচার্জ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানান, এ দিন সকালে তিন ছাত্রী নিয়ম মেনেই রাস্তা পেরিয়ে হাঁটছিল। সেই সময়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল একটি ট্রেলার। হঠাৎ সেটি উল্টো দিকে বাঁক নেয়। ট্রেলারের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে নেহা পরভিন নামে এক ছাত্রী। পিষ্ট হয়ে যায় নবম শ্রেণির আসমিনা। এর পরেই ট্রেলার নিয়ে চালক চম্পট দেন। কিছু পরেই অবশ্য ধরা পড়ে যান তিনি।
চালকের গ্রেফতারের দাবিতে আসমিনার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অন্য ছাত্রীদের অভিভাবকেরা পথ অবরোধ করেন। পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই উত্তেজনা বাড়ে। তাঁদের অভিযোগ, কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের গাফিলতিতেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে দুই ছাত্রী। দিনভর লরি, ট্রেলার বেপরোয়া গতিতে ওই রাস্তা দিয়ে চলে। আশপাশে একাধিক স্কুল রয়েছে। বহু বার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। স্কুল ছুটির সময়ে পড়ুয়াদের পথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের তরফেও থানায় আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। আসমিনার দাদা তকির আলমের অভিযোগ, এ দিন পথ অবরোধ তুলতে পুলিশ লাঠি চালালে তার কানে ও ঘাড়ে চোট লাগে।
লাঠিচার্জের অভিযোগ প্রসঙ্গে পশ্চিম বন্দর থানার এক অফিসার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মৃদু লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল।’’ বেপরোয়া গতিতে লরি এবং ট্রেলার চলার বিষয়ে ডি সি (বন্দর) সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘স্থানীয়দের সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
মৃতার পরিবার সূত্রে খবর, তার বাবা গত বছর ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। মা নুরজাহান বেগম কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালান। গার্ডেনরিচের একচিলতে ঘরেই পনেরো বছরের মেয়ে আর সতেরো বছরের ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। এ দিন মেয়ের মৃত্যুর খবরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ দিনের দুর্ঘটনায় আহত আর এক ছাত্রী নেহা আসমিনার তুতো বোন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও তার আতঙ্ক এখনও কাটেনি। সঙ্গে থাকা আর এক বন্ধু শাহিন পরভিন বলে, ‘‘একটু পিছিয়ে ছিলাম, তাই বেঁচে গেলাম। আর কখনও কি ওই রাস্তায় হাঁটতে পারব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy