কয়েক বছর ধরেই শহিদ মিনারের বাজিবাজারে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন ক্রেতারা। এ বার কি বিক্রেতারাও মুখ ফেরাচ্ছেন সেখান থেকে?
ঝঞ্ঝাট এড়াতে চিনাবাজারের গলি থেকে ১৯৯৫ সালে শহিদ মিনারে উঠে এসেছিল বাজিবাজার। প্রায় ১২০টি স্টলে ভিড় জমিয়েছিলেন মানুষ। কিন্তু গত দশকের মাঝামাঝি থেকে ভিড় কমতে শুরু করেছিল। গত কয়েক বছরে কমছে স্টলের সংখ্যাও। বড়বাজার ফায়ার ওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ বুধিরাজা জানান, ২০১৪ সালে ৬২টি ও ২০১৫ সালে ৫৬টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এ বছর স্টলের সংখ্যা পঞ্চাশ ছোঁবে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন বুধিরাজা।
ক্রেতােদর একাংশের অভিযোগ, শহিদ মিনারের বাজিবাজারে দাম বেশি। মানও ভাল নয়। দমদমের এক ক্রেতা বলছেন, বছর দুই আগে শহিদ মিনার থেকে ২০০০ টাকার বাজি কিনেছিলেন। বহু রংমশাল ঠিক মতো জ্বলেনি, তুবড়ি ফেটে গিয়েছিল! শ্যামবাজারের এক যুবকের কথায়, ‘‘বাজি খারাপ হলে পা়ড়ার দোকানিকে বলা যায়। শহিদ মিনারের দোকানিরা তো আর বসে থাকবে না।’’ গিরিশ পার্কের বাসিন্দা সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত বছর বাজি বাজার থেকে কেনা ৩০টি তুবড়ির ২৫টি ফাটেনি।’’ যদিও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ মানতে নারাজ।
শহিদ মিনারের পুরনো বাজি ব্যবসায়ী রাজকুমার নারুলার মতে, দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই স্থানীয় দোকান থেকে বাজি কিনছেন। বাজিবাজারের সংখ্যা বাড়াটাও ক্রেতা কমার অন্যতম কারণ। গত কয়েক বছরে একে একে টালা পার্ক, বিজয়গড়, কিশোর ভারতী স্টেডিয়াম, বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলের মাঠ, কালিকাপুর এবং বজবজে বাজি বাজার শুরু হয়েছে। আগে শুধু শহিদ মিনার ময়দানে যে সব ক্রেতারা যেতেন, তাঁরা এখন এলাকার বাজিবাজারেই যাচ্ছেন।
কিন্তু দোকানিরা মুখ ফেরাচ্ছেন কেন? ইন্দ্রজিৎ বলছেন, গোড়ায় প্রতিটি স্টলের মালিককে প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে দিতে হত। তখন অবশ্য সেনা বাণিজ্যিক হিসেবে টাকা নিত না। পরবর্তী কালে বাণিজ্যিক হারে কর বসানোয় খরচ বেড়েছে। এখন প্রতিটি স্টলকে ৭ দিনে ৯ লক্ষ টাকা দিতে হয়। ক্রেতা কমেছে, তার উপরে বাজির দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। ফলে দোকানিরা লাভের মুখ দেখছেন না। ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, এই কারণে ব্যবসায়ীরা শহরের অন্য বাজিবাজারগুলিতে দোকান দিতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
যদিওগত কয়েক বছরে টালা পার্কের বাজিবাজারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অনেকেই বলছেন, টালার বাজি তুলনায় ভাল। দোকানিরাও সেখানে স্টল দিতে চাইছেন। ওই বাজি বাজারের সভাপতি সঞ্জয় দত্তের কথায়, ‘‘এ বছর ৪৪টি স্টল হয়েছে। এখনও ১৫-২০ জন স্টল দিতে চাইছেন। আমরা পুলিশের অনুমতি চেয়েছি।’’ তবে ওই বাজারের খরচও বেড়েছে। ২০১২-এ স্টলপিছু ১২,০০০ টাকা লেগেছিল। এ বার দিতে হচ্ছে ২৫,০০০। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নুঙ্গি থেকে আসা অনেক ব্যবসায়ী এখন বজবজের বাজিবাজারে দোকান দিচ্ছেন। তাতে শুধু স্টল ভাড়া নয়, গাড়ি-সহ সব খরচই কম পড়ছে।
ক্রেতাদের কাছে পৌঁছতে এ বার নতুন ধরনের প্রয়াসও নিয়েছেন টালা বাজিবাজারের কর্তারা। ওই সংগঠনের কর্তা শুভঙ্কর মান্না নিজের প্রয়াসে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ চালু করেছেন। ‘কলকাতা বাজিবাজারস ডট কম’ নামে ওয়েবসাইট বা ‘কেবিবি’ নামে অ্যাপের মাধ্যমে বাজি নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন। তাতে কলকাতার প্রায় সব বাজি বাজারকেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
বাজি আটক। নিষিদ্ধ শব্দবাজি রুখতে জেলা ও শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে। পুলিশ জানায়, শনিবারের অভিযানে নোদাখালি থেকে ২০ বস্তা চকোলেট বোমা ও ১০ বস্তা বারুদ আটক হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে তিন জন। রবিবার চম্পাহাটির হারাল থেকে ২৫০০০ চকোলেট বোমা, দোদোমা এবং আলু বোমা আটক করা হয়েছে। সেখান থেকেও গ্রেফতার হয়েছে তিন জন। রবিবার বিকেলে পশ্চিম বন্দরের জৈনপুর ক্রসিংয়ে তল্লাশি চালানোর সময়ে একটি লরি থেকে ১৫০০ কেজি শেল ও মাল্টিপল শটার আটক করে পুলিশ। গ্রেফতার হয় লরিচালক। জানা গিয়েছে, নুঙ্গি থেকে ওই মাল যাচ্ছিল বড়বাজারের কোনও ব্যবসায়ীর কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy