Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সঞ্চয় প্রকল্পের নামে প্রতারণা, টাকা খোয়ালেন বৃদ্ধেরা

সঞ্চয় করতে গিয়ে উল্টে ওঁদের নিঃস্ব হওয়ার দশা। অভিযোগ, বেসরকারি সঞ্চয় প্রকল্পের প্রতারণার শিকার হয়ে টাকা খোয়াতে বসেছেন বেশ কয়েক জন বৃদ্ধ।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০২:৩৯
Share: Save:

সঞ্চয় করতে গিয়ে উল্টে ওঁদের নিঃস্ব হওয়ার দশা। অভিযোগ, বেসরকারি সঞ্চয় প্রকল্পের প্রতারণার শিকার হয়ে টাকা খোয়াতে বসেছেন বেশ কয়েক জন বৃদ্ধ। অগত্যা শেষ জীবনের সম্বলটুকু বাঁচাতে এখন পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন ওঁরা। তবে তা কত দিনে ফেরত পাবেন, তা জানেন না কেউই। তদন্তে নেমে গ্রাহকদের তরফেও সচেতনতার অভাবের কিছু নজির পেয়েছে পুলিশ। তবে সে সব ছাপিয়ে গিয়েছে ওই বৃদ্ধদের অসহায়তা।

গড়িয়ার রামগড়ের বাসিন্দা অসিত সেনগুপ্ত কেন্দুয়া মহেন্দ্রনাথ হাইস্কুলের অঙ্কের প্রাক্তন শিক্ষক। ৭৬ বছরের অসিতবাবুর থেকে পলিসি করানোর নামে কয়েক বারে ৩৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘ফোনে যোগাযোগ করে সোজা বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিল কয়েক জন। বাইপাসের ধারে ঝাঁ-চকচকে অফিস দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করে আমার থেকে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে অন্যের নামে পলিসি করিয়েছে। আর বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের খাতে চেক আর ড্রাফ্ট মারফত আরও ১৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে। এ ছাড়াও, বিভিন্ন ভাবে ঠকিয়ে আরও ৯ লক্ষ টাকা নিয়েছে। যে কোনও সময় টাকা নিতে এলে ওরা বলত, বাড়ির লোককে যেন এ সব কথা না জানাই।’’

একই অভিজ্ঞতা মানস দাশগুপ্তের। ৭৩ বছরের বৃদ্ধ এখন সর্বস্ব খুইয়ে শয্যাশায়ী। অভিযোগ, তাঁকেও একই ভাবে সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখার লোভ দেখিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। একাধিক পলিসি করিয়েছিলেন। পলিসির কাগজ হাতে পেয়ে দেখেন কোনওটিতে সই অন্য লোকের, কোনওটিতে আবার তাঁর ছেলেদের সই জাল করে তাঁদের নামে করে দেওয়া হয়েছে। মানসবাবুর ছেলে সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পলিসি করলে সেটি নিশ্চিত করার জন্য সংস্থার তরফে ফোন করা হয়। সেখানেও ওই প্রতারকেরা নিজেদের ফোন নম্বর দিয়ে রেখেছিল। তাই আমরা কিছু জানতেই পারিনি। যে পলিসিগুলি দেওয়া হয়েছে, সেগুলির বার্ষিক প্রিমিয়াম চার লক্ষ টাকা। যা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেই পলিসিগুলির টাকা জলে গিয়েছে বলেই আমরা ধরে নিচ্ছি।’’

কর্মজীবন থেকে অবসরপ্রাপ্তদের সঞ্চয়ের লোভ দেখিয়ে এমন প্রতারণার একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের কাছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য গ্রাহকদের তরফে একটু সচেতনতাও থাকা উচিত ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। অভিযুক্তদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে কয়েক জন মহিলাও রয়েছেন। খোঁজ চলছে আরও অনেকের। সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের ঠিকানা সল্টলেকের শিল্পতালুক পাঁচ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির অফিস।

বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, সব ক্ষেত্রেই ফাঁদে ফেলা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধদের। তিনি বলেন, ‘‘নামীদামি বেসরকারি সংস্থার সঞ্চয় প্রকল্পে ওই বয়স্ক মানুষদের টাকা রাখার ছুতো করে পুরো টাকাটাই অভিযুক্তেরা আত্মসাৎ করেছে। বৃদ্ধদের থেকে ড্রাফ্ট নিয়ে সেই টাকায় নিজেদের আত্মীয়দের নামে পলিসি কিনেছে। তার পরে সেই পলিসি ভাঙিয়ে টাকাও তুলে নিয়েছে।’’ তিনি জানান, গত এক বছরের মধ্যে অভিযোগ দায়ের হওয়া আর অভিযোগ দায়ের না হওয়া মিলিয়ে অন্তত ১০টি এমন ঘটনা ঘটেছে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায়। তদন্তকারীরা জানান, বিভিন্ন সংস্থা তাদের সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখার জন্য গ্রাহক পেতে কিছু এজেন্সিকে বরাত (ব্রোকারি) দিয়েছে। সেই সব এজেন্সির লোকই প্রতারণা করছে।

গোয়েন্দা প্রধান জানান, প্রতিটি মামলায় দেখা গিয়েছে, নিশানা বৃদ্ধেরা। যাঁরা মূলত মোটা টাকা সঞ্চয় করে মাসিক কিস্তি নিতে পছন্দ করেন। যে ক’জন ধরা পড়েছে, তারা প্রত্যেকেই ভুয়ো পরিচয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ফোন নম্বরও সঠিক দেওয়া হয়নি। গ্রেফতারের পরে ধৃতেরা কবুল করেছে যে, গ্রাহকদের থেকে টাকা নিয়ে তা নিজেদের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেয় তারা। মঙ্গলবারও এমন একটি ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে বিধাননগর পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Financial company chit fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE