আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই শুক্রবার এই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাত নেতাকে গ্রেফতার করল বিধাননগর পুলিশ। গত মঙ্গলবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালানো, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও আটকে রাখার অভিযোগে এ দিন দক্ষিণেশ্বর থেকে তাঁদের ধরা হয়। ধৃতদের মধ্যে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজারহাট ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রউফ।
পুলিশ জানায়, ধৃত বাকি ছ’জনের নাম শামী শেখ, সোহেল আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, আক্রম রাজা, শামিম আখতার ও মহম্মদ রফিকুল হক।
পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্ত শুরুর পর থেকেই অভিযুক্তদের ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্যাপ করা শুরু হয়। খবর মেলে, বারাসত আদালতে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন নিতে পারেন অভিযুক্তেরা। এর পরেই বাড়ানো হয় পুলিশি নজরদারি। ইতিমধ্যে শুক্রবার ফোনের টাওয়ার লোকেশন থেকে বোঝা যায় দক্ষিণেশ্বরে এক জায়গায় একসঙ্গেই রয়েছেন অভিযুক্তেরা। সেখান থেকেই তাঁদের ধরে পুলিশ।
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, জোর করে আটকে রাখা ও ভাঙচুরে ধৃত সাত জনের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ও জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে।’’
গত মঙ্গলবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজারহাট ক্যাম্পাসে উপাচার্যের ঘর, ল্যাবরেটরি ও শিক্ষকদের ঘরে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের ওই ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে। সে দিন রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের সচিব সৈয়দ আহম্মদ বাবাকেও ঘেরাও করে রাখা হয়। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল, অঙ্কের পরীক্ষায় সাপ্লিমেন্টারিতে ৬৫ শতাংশ নম্বর দেওয়ার দাবি জানান তৃণমূল ছাত্র নেতারা। সেই দাবি মেনে না নেওয়াতেই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।
যদিও সে দিন ওই ছাত্রনেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রেরা নূন্যতম পরিষেবা পান না। সেই অভিযোগই জানাতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাঁদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবারের ওই ঘটনা অবশ্য সেখানেই থেমে থাকেনি। পরদিন, বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রকে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বলে খবর। সেই চাপে কার্যত বাধ্য হয়েই ওই ছাত্র নেতাদের শো-কজ করা হয়। তার পরেও খোদ অশোকবাবুই দাবি করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রউফকে কলার ধরেন। তার পরেও এ দিন এই গ্রেফতারির পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষই কাজ করেছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। সেই মতকে আরও জোরালো করেছে এক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বিবৃতি, যেখানে প্রকাশ্যেই এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি।
একটি বেসরকারি চ্যানেলের ওই অনুষ্ঠানে মমতা সাফ বলেন, ‘‘ক্ষোভ কারও কারও থাকতেই পারে। তার জন্য ভাঙচুর করতে হবে কেন? আমিও ছাত্র আন্দোলন করেছি। শিক্ষক-অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা মিটিয়েছি। ভাঙচুর জীবনে করিনি।’’ আলিয়ার অধ্যক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই কয়েক জন গ্রেফতার হওয়ার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘অধ্যক্ষ অভিযোগ করেছেন। আইন তো তার কাজ করবেই। আইন আইনের পথে চলবে।’’ আগামী দিনে এ ধরনের ভাঙচুর থেকে ছাত্রদের বিরত রাখতে তাঁর বার্তা, ‘‘মাথা ঠান্ডা রেখে চলতে হবে। নিজেদের সংশোধন যেন ছাত্ররা করে।’’
যদিও এই গ্রেফতারিকে নিছকই লোক দেখানো বলেই দাবি সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায় বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগেও রানিগঞ্জে শাসক দলের ছাত্রনেতা সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু পরের দিন বিনা
বাধায় তিনি ছাড় পেয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রেও তেমনই হতে পারে। তবে এই গ্রেফতারির অর্থ কী?’’
খানিকটা একই সুর ছাত্র পরিষদের গলাতেও। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে, এটাই কাম্য। তবে দেখতে হবে এ ক্ষেত্রেও যেন রানিগঞ্জের পুনরাবৃত্তি না হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy