Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অগভীর কম্পনই মাথা ঘোরাল শহরের

২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভোরে সুনামি যখন আছড়ে পড়ল আন্দামান এবং তামিলনাড়ু উপকূলে, তখন কেঁপে উঠেছিল কলকাতা। ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিকিমের ভূমিকম্পও নাড়িয়ে দিয়েছিল কলকাতাকে। কিন্তু শনিবারের মতো এমন আতঙ্ক কোনও বারই ছড়ায়নি। কারণ ওই দু’বার মহানগর এমন ভাবে কাঁপেনি টানা দু’মিনিট ধরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভোরে সুনামি যখন আছড়ে পড়ল আন্দামান এবং তামিলনাড়ু উপকূলে, তখন কেঁপে উঠেছিল কলকাতা। ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিকিমের ভূমিকম্পও নাড়িয়ে দিয়েছিল কলকাতাকে। কিন্তু শনিবারের মতো এমন আতঙ্ক কোনও বারই ছড়ায়নি। কারণ ওই দু’বার মহানগর এমন ভাবে কাঁপেনি টানা দু’মিনিট ধরে।

তিনটি ভূমিকম্পই কলকাতার এক বহুতলের ন’তলায় বসে অনুভব করেছেন ৫৪ বছরের দেবপ্রিয় বসু। বলছেন, সুনামির কম্পনটা ভাল ভাবেই টের পেলেও সিকিমের কম্পন ছিল অনেকটা না বোঝার মতোই। এক আত্মীয় ফোন করে না বললে বুঝতেই পারতেন না তিনি। কিন্তু এ বারের ভূমিকম্পে রীতিমতো বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন ওই প্রৌঢ়। তাঁর মাথা এমন ঘুরে গিয়েছিল যে, সিঁড়িতেই বসে পড়েছিলেন। পরে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের ফোন করে জেনেছেন, যাঁরা রাস্তায় ছিলেন, তাঁরাও এ বারের ভূমিকম্পটা বেশ টের পেয়েছেন। তাঁদেরও অনেকের মাথা ঘুরে গিয়েছে।

সুনামির ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল এ দিনের ভূমিকম্পের থেকে বেশি। তা হলে এ বারের অনুভূতিটা কেন অনেক বেশি হল?

খড়গপুর আইআইটি-র ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ শঙ্করকুমার নাথ জানাচ্ছেন, ভূমিকম্পের পরে দু’ধরনের তরঙ্গপথ ধরে কম্পন ছড়িয়ে পড়ে দূর-দূরান্তে। একটি ভূগর্ভস্থ তরঙ্গপথ (বডি ওয়েভ)। অন্যটি ভূপৃষ্ঠ তরঙ্গপথ (সারফেস ওয়েভ)। ভূপৃষ্ঠ তরঙ্গপথে কম্পন ছড়িয়ে পড়লে মাটির উপরে দোদুল্যমানতা বাড়ে। দোলনটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ দিনের ভূমিকম্পের উৎস ছিল ভূ-পৃষ্ঠের মাত্র ১১ কিলোমিটার নীচে। তাই কম্পনটা ভূপৃষ্ঠ তরঙ্গপথ ধরেই ছড়িয়ে পড়েছে। এবং সেই কারণেই কলকাতায় মানুষেরা ভাল ভাবে বুঝতে পেরেছেন কী হচ্ছে। মাটি মিনিট দুয়েক ধরে কাঁপতে থাকায় অনেকেরই মাথা ঘুরে গিয়েছে। ২০০৪ এবং ২০১১ সালের দু’টি ভূমিকম্প ছড়িয়েছিল ভূগর্ভস্থ পথে। তাই মাটি বেশি ক্ষণ কাঁপেনি। মাথাও ঘোরেনি।

কলকাতায় ভূমিকম্পের শক্তি কতটা ছিল?

আইআইটি-র ওই বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে তার মাত্রা যতই থাকুক না কেন, কম্পন যত দূরে ছড়ায় তত তার শক্তি কমতে থাকে। কলকাতায় যেমন ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪। পটনায় ছিল ৫। মুম্বইয়ে আবার তা ছিল অনেক কম। মাত্র ২।

এ দিন কলকাতায় ভূমিকম্পের পরে-পরেই আকাশ কালো করে দু’দফায় প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। দুইয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি?

অনেকে এই বৃষ্টির সঙ্গে ভূমিকম্পকে জুড়ে দিতে চাইলেও আবহবিদ এবং ভূমিকম্প বিশারদেরা জানিয়েছেন, দুইয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্কই নেই। দু’টি তৈরি হয় দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা প্রাকৃতিক কারণে।
এ ভাবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করা যায় না। সমুদ্র থেকে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প এসে ঘন মেঘ তৈরি করেছে। তা থেকে বৃষ্টিটা নামিয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। ভূমিকম্প না হলেও এমনটা হতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE