Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

থানায় তথ্য না দেওয়ায় বাড়ছে বিপদ

গত ২২ অক্টোবর বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও গয়না নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ওই পরিচারিকার একটা নাম শুধু জানতেন গৃহকর্ত্রী। পুলিশের কাছে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে যাওয়ার সময়েই তিনি বুঝতে পারেন, কী ভুল করেছেন।

চুরি যাওয়া জিনিস মিলল পরিচারিকার বাড়ি থেকে। নিজস্ব চিত্র

চুরি যাওয়া জিনিস মিলল পরিচারিকার বাড়ি থেকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:২০
Share: Save:

গৃহকর্তা থানায় পরিচারিকার নাম-ধাম জানাননি বটে, কিন্তু নিজে তাঁর ঠিকানা লিখে রেখেছিলেন। আর তার জেরেই সুষমা মণ্ডল নামে ওই পরিচারিকাকে রবিবার দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সোনার গয়না-সহ দু’টি দামি মোবাইল।

নেতাজিনগরের এনএসসি বসু রোডের গৃহকর্তা তবু ওই পরিচারিকার ঠিকানাটি রেখে দিয়েছিলেন। তাই সুষমাকে খুঁজে বার করতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি পুলিশকে।
কিন্তু গড়িয়াহাটের এক গৃহকর্ত্রী ও সবের কিছুই করেননি। থানায় যেমন পরিচারিকার তথ্য জমা দেননি, তেমনই নিজেও তাঁর ঠিকানা, পরিচয় রাখেননি।

গত ২২ অক্টোবর বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও গয়না নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ওই পরিচারিকার একটা নাম শুধু জানতেন গৃহকর্ত্রী। পুলিশের কাছে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে যাওয়ার সময়েই তিনি বুঝতে পারেন, কী ভুল করেছেন। পুলিশ শুক্রবার রাতে গড়িয়ার ফর্তাবাদ থেকে নাসিমা খাতুন নামে ওই পরিচারিকাকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর কাছ থেকে চুরি যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

শুধু চুরিই নয়। পরিচারক বা পরিচারিকার হাতে গৃহকর্তা এবং গৃহকর্ত্রী খুন হয়ে যাওয়ার পরেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তদন্তকারীরা দেখেছেন, থানায় নথি জমা দেওয়া দূরে থাক, ভুক্তভোগী পরিবারের কাছেও তাঁদের পরিচারক-পরিচারিকাদের ঠিকানা সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, নাগরিকদের একাংশ এখনও সচেতন না হওয়ায় যেমন চুরি বাড়ছে, তেমনই তদন্তে নেমে পুলিশকেও অন্ধকারে হাতড়াতে হচ্ছে। নিজেদের তথা নিজেদের ধন-সম্পত্তি রক্ষায় নাগরিকদের এই ‘উদাসীনতা’ পুলিশকে ভাবাচ্ছে।

পুলিশ জানাচ্ছে, নিয়ম মতো বাড়িতে ভাড়াটে বা পরিচারক-পরিচারিকা রাখার সময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় তাঁর সম্পর্কিত তথ্য জমা দেওয়ার কথা। এ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট ফর্মও শহরের প্রতিটি থানায় রাখা আছে। ওই ফর্ম ভরে ভাড়াটে বা পরিচারক-পরিচারিকার নাম, ঠিকানার প্রমাণপত্রের প্রতিলিপি সহ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হয়। কিন্তু অধিকাশ বাড়ির মালিকই এই ফর্ম সংগ্রহ করেন না। লালবাজারের এক কর্তার দাবি, নাগরিকেরা এই নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে থানায় জমা দিলে চুরির ঘটনা যেমন অনেকটা ঠেকানো যেতে পারে, তেমনই কোনও ঘটনা ঘটার পরে পরিচারক-পরিচারিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁদেরও খুঁজে বার করতে সুবিধা হয়।

লালবাজার জানাচ্ছে, বাড়িতে বসে যাতে ভাড়াটে বা পরিচারক-পরিচারিকার যাবতীয় তথ্য রেকর্ড করে রাখা যায়, সে জন্য পুলিশের নির্দিষ্ট ‘বন্ধু’ অ্যাপও আছে। কিন্তু সেই অ্যাপ ব্যবহারেও নাগরিকদের একাংশের অনীহা রয়েছে বলে জানাচ্ছে লালবাজার।

পুলিশ সূত্রের খবর, বেশিরভাগ গৃহস্থ বাড়িতেই পরিচারক-পরিচারিকারা মূলত দুই ২৪ পরগনার। তাঁদের অনেকেই শহরতলিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। গড়িয়াহাটে চুরির অভিযোগে ধৃত মহিলা ছদ্মনামে গড়িয়ার ফরতাবাদে একটি ভাড়া বা়ড়িতে থাকতেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাঁর খোঁজ পায় পুলিশ। লালবাজার বলছে, ‘‘কাজে নিয়োগের শুরুতেই থানায় পরিচারিকাদের তথ্য পাঠালে বিপদের সময়ে সুবিধা হয়। অনেকেই সেটা বোঝেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stealing Dacoity Police Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE