মধ্য কলকাতার একটি সরু গলি। তাতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি। নড়ার উপায় নেই। তবুও সমানে হর্ন বাজিয়ে চলেছেন চালকেরা। সেই শব্দে আশপাশের লোকজনের কানে তালা ধরার জোগাড়!
শ্যামপুকুরের একটি গলিতে পর পর দু’টি স্কুল। সেখানে গাড়ি চলেছে হর্ন বাজিয়ে। পড়ুয়াদের অনেকেই রীতিমতো কেঁপে উঠছে সেই তীব্র শব্দে। অথচ পরিবেশ আইন অনুযায়ী, স্কুল-কলেজ-হাসপাতালের সামনের রাস্তা সাইলেন্স জোন।
মধ্য কলকাতার একদল ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন এলাকার শব্দমাত্রা মাপছিলেন সাউন্ড লেভেল মিটারে। যন্ত্র দেখাচ্ছিল, মধ্য কলকাতার গলিতে শব্দমাত্রা ৮৫ ডেসিবেল। শ্যামপুকুরের সাইলেন্স জোনে তা ৭৫।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ও রাতে ৫৫ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা থাকতে পারে। আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল। সাইলেন্স জোনে দিনে ৫০, রাতে ৪০। কলকাতার ক্ষেত্রে বহু জায়গায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা আলাদা করা যায় না। সে ক্ষেত্রে দিনে ৬৫ ডেসিবেল শব্দমাত্রাকেই সর্বাধিক ধরা হয়।
কিন্তু সাউন্ড লেভেল মিটারের রিডিং অনুযায়ী বাণিজ্যিক এলাকায় দুপুরে শব্দের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ২০ ডেসিবেল বেশি। সাইলেন্স জোনে সেই বৃদ্ধিটা ২৫ ডেসিবেল। আইন থাকতেও তা কার্যকর না হওয়াতেই এই অবস্থা, এমনই বলছেন পরিবেশবিদেরা।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘রাস্তায় গাড়ির যা আওয়াজ, তাতে সব সময়েই শব্দমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকে।’’ পরিবেশকর্মীরা বলছেন, হাসপাতালের সামনেও শব্দের দাপটে অতিষ্ঠ হওয়ার জোগাড় হয়।
পরিবেশবিদেরা আরও বলছেন, এখন যে কোনও পুজোয় দেদার বাজি ফাটে। বিস্তর ধরপাকড়ের পরেও কালীপুজো বা দীপাবলির রাতে শব্দমাত্রা ৯৫-১০০ ডেসিবেলের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। বিসর্জনের শোভাযাত্রা বা পাড়ার জলসার ডিজে-র (বড় সাউন্ড বক্স) সময়ে তা পৌঁছয় ১২০ ডেসিবেলে।
অন্য শহরের মতো কলকাতাতেও নিত্যদিন শব্দ দূষণের মূল দায় গাড়ির। যে ভাবে চালকেরা নির্বিচারে হর্ন বাজান, তাতে দূষণের মাত্রা উঠে থাকে ৮০-৯০ ডেসিবেলে। পুরনো গাড়ির (বিশেষত সরকারি) ইঞ্জিনের শব্দও প্রায় ৮০ ডেসিবেলের কাছাকাছি।
এক পরিবেশকর্মী মনে করিয়ে দিয়েছেন, বছরখানেক আগে ট্রামের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে এজলাসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র। দেখা যায়, ওই শব্দের মাত্রা৯৫ ডেসিবেল।
শব্দদানবের থেকে কলকাতাবাসীকে বাঁচাতে একদল পরিবেশকর্মী কোমর বেঁধে নামছেন। তাঁদের দাবি, কোনও এলাকাতেই শব্দের মাত্রা ৬৫ ডেসিবেল যাতে না হয়, সে জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
শহরের সব নাগরিককে কি সঙ্গে পাবেন পরিবেশকর্মীরা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy